২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। এরপর তিনি হয়ে উঠেছিলেন আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক। তাঁর মতামতই যেন ছিল আর্থিক খাতের নীতিসিদ্ধান্ত। এই সুযোগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগপর্যন্ত নামে-বেনামে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ তুলে নেন তিনি। নিয়মের মধ্যে বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় অন্যদের নামে তৈরি করেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি নিত্যনতুন বিনিয়োগ পণ্য চালু করে ব্যাংকের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকেও টাকা তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একাধিক নিয়ম শিথিল করে সালমান এফ রহমানকে এভাবে অর্থ নিতে সহায়তা করে।
প্রথম আলোর সংগ্রহ করা নথিপত্র অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি আট ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ (নন-ফান্ডেডসহ) দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এসব ব্যাংক বেক্সিমকোর বন্ড ও সুকুকে আরও ২ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর বাইরে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বেক্সিমকোর দেনা রয়েছে বলে জানা গেছে, যা এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুঁজে দেখছে। সুতরাং সালমান এফ রহমানের নেওয়া প্রকৃত ঋণ আরও অনেক বেশি। জানা গেছে, রাষ্ট্র খাতের সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও বেসরকারি খাতের এবি, এক্সিম, ন্যাশনাল, সিটি, শাহ্জালাল ইসলামী, সাউথইস্ট, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকসহ আরও নানা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের দেনা রয়েছে।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আর্থিক খাতে বেশি বেপরোয়া হতে শুরু করেন সালমান এফ রহমান, বিশেষ করে করোনার টিকা সরবরাহের কাজ পাওয়ার পর। রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক থেকে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নয়টি নতুন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেন। আর ২০২২ সালের শুধু জুলাইয়ে আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ তৈরি করে বেক্সিমকো গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা এখন প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এক জনতা ব্যাংকেই বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফলে দেশের খেলাপি ঋণের শীর্ষে উঠেছে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংক একটি গ্রুপকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারে, দিয়েছে তার প্রায় ১৬ গুণ বেশি।
সালমান এফ রহমানের নেওয়া প্রকৃত ঋণ আরও অনেক বেশি। জানা গেছে, রাষ্ট্র খাতের সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও বেসরকারি খাতের এবি, এক্সিম, ন্যাশনাল, সিটি, শাহ্জালাল ইসলামী, সাউথইস্ট, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকসহ আরও নানা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের দেনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পাশাপাশি ২০১৫ সাল থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সালমান এফ রহমান। এখান থেকেও একই কায়দায় নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের টাকা বিল-বন্ডের মাধ্যমে তুলে নেন। ফলে আইএফআইসি ব্যাংকে নামে-বেনামে গ্রুপটির ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। বেক্সিমকোর বন্ড ও সুকুকে আরও ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি।
এসব নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের বক্তব্য জানতে গত ১৮ দিন ধরে গ্রুপটির জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট পিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বক্তব্য দিতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সালমান এফ রহমান আটক হওয়ার পর এসব ঋণ ও বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁরা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সালমান এফ রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনীতি লুটপাটের অন্যতম হোতা। এ ছাড়া এস আলমসহ কয়েকজন মিলে দেশটাকে লুট করেছে। এরা সবাই ছিল শেখ হাসিনার লুটপাটযন্ত্র। তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। এ জন্য দায়ী শেখ হাসিনা। তাদের ব্যবসা কী হবে, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমরা এসব লুটেরার শাস্তি দেখার অপেক্ষায় আছি। আশা করছি বর্তমান সরকারের মেয়াদে দ্রুতই তাদের শাস্তি হবে।’
মইনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সালমান এফ রহমান এতটা ক্ষমতাধর ছিলেন যে তাঁকে বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। এই কারণে ইচ্ছেমতো লুট করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর তা আরও বেড়েছিল।’
আইএফআইসি ব্যাংকে নামে-বেনামে গ্রুপটির ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। বেক্সিমকোর বন্ড ও সুকুকে আরও ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি।
যত অভিনব সুযোগ
২০১৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ঋণ পুনর্গঠন করতে অভিনব এক প্রস্তাব দেন। ঋণ পরিশোধে বিরতি, সুদহার কমানো, মেয়াদ বাড়ানোসহ নানা সুবিধা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তখন তিনি সরকারি কোনো পদে ছিলেন না। এরপরও তাঁর চাপে বৈশ্বিক নীতিমালা পাশ কাটিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান তখন ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করেন। এর আওতায় সাত ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের ৫ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠন করে। একই সুবিধা নেয় আরও ১০টি গ্রুপ।
সালমান এফ রহমান তখন গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ গ্রহণে বাধা দেওয়াসহ ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এতে প্রায়ই গ্রুপটিকে চলতি মূলধন সংকটে পড়তে হচ্ছে।’
এরপর নিজের জন্য চিঠি দিয়ে আর কোনো সুবিধা নিতে দেখা যায়নি সালমান এফ রহমানকে। তবে থেমে ছিলেন না। ২০১৭ সালের পর বেক্সিমকো কমিউনিকেশন (আকাশ) বন্ড, সুকুক বন্ড, আইএফআইসি আমার বন্ডসহ নানা উপায়ে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছে। গত মার্চে নতুন করে বন্ড ছেড়ে ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা তোলার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
আর্থিক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ছয় বছরে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাঁর কবজায় ছিল, ফলে অর্থ পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। এ জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি শেয়ারবাজার থেকেও ইচ্ছেমতো টাকা হাতিয়ে নিতে পেরেছেন।
সালমান এফ রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনীতি লুটপাটের অন্যতম হোতা। এ ছাড়া এস আলমসহ কয়েকজন মিলে দেশটাকে লুট করেছে। এরা সবাই ছিল শেখ হাসিনার লুটপাটযন্ত্র।অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম
করোনায় বেপরোয়া সালমান
সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ ১৯৭৮ সাল থেকে জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। ১৯৯৮ সালে গ্রুপটির পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সামনে আসেন সালমান এফ রহমান। এরপর বেক্সিমকোর টেক্সটাইল, এলপিজি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। ২০১৫ সালে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ছিল ২ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে যা বেড়ে হয় ৪ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ঋণ ছিল ৬ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা, পরের বছর যা বেড়ে হয় ১২ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। ২০২২ সালে বেক্সিমকোর ঋণ আরও বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, ২০২৩ সাল শেষে যা হয় ২৩ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে ব্যাংকটিকে বেক্সিমকোর ঋণ বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি।
আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এসব ঋণ অন্য নামে ছিল। এভাবেই এত দিন চলে আসছিল। নতুন করে আর ঋণ বাড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন বেক্সিমকো নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা জানতে আমরা অপেক্ষা করছিজনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার
ব্যাংকটির মতিঝিলের স্থানীয় কার্যালয় শাখা থেকে এই অর্থায়ন করা হয়। শাখাটির ৭০ শতাংশ ঋণই বেক্সিমকো গ্রুপের। ফলে শাখাটির আমদানি-রপ্তানি বিভাগের পুরোটাই হয়ে উঠেছে বেক্সিমকোময়। বেক্সিমকোর ২৯টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ওই শাখার গ্রাহক। ব্যাংকটির মতিঝিলের স্থানীয় কার্যালয় শাখা থেকে এই অর্থায়ন করা হয়, তখন শাখাটির ব্যবস্থাপক ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি এখন প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত।
ব্যাংকটির এক নথিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বেক্সিমকোর ১১ প্রতিষ্ঠান শাখাটির গ্রাহক ছিল। এরপরের এক বছরে ৯টি প্রতিষ্ঠান ও ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৮টি প্রতিষ্ঠান শাখাটি থেকে ঋণ পায়। ২০২১ সালের জুনের পর গ্রাহক হয়েছে এমন ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এসব ঋণ অন্য নামে ছিল। এভাবেই এত দিন চলে আসছিল। নতুন করে আর ঋণ বাড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন বেক্সিমকো নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা জানতে আমরা অপেক্ষা করছি।’
বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু অংশ রপ্তানি করেছে দুবাইয়ের আরআর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ে। বেক্সিমকোর অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমান, দুবাইয়ের আরআর গ্লোবালের কর্ণধার তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান। রপ্তানির অর্থ সময় পেরিয়ে গেলেও দেশে আসছে না। এমন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আটকে আছে।
এত অল্প সময়ে এতগুলো প্রতিষ্ঠান কীভাবে ঋণ পেল, তা জানতে চাইলে শাখাটির দুজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় বেক্সিমকো পরিবারের কেউ ছিল না। ফলে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমোদন দিয়েছে। এর প্রকৃত তথ্য জানতেন শুধু চেয়ারম্যান ও এমডি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে সব প্রতিষ্ঠানকে একই গ্রুপভুক্ত করা হয়।
বেক্সিমকোর অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমান, দুবাইয়ের আরআর গ্লোবালের কর্ণধার তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান। রপ্তানির অর্থ সময় পেরিয়ে গেলেও দেশে আসছে না। এমন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আটকে আছে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান ও তখন এমডি ছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অনুমোদন পর্ষদে দেওয়া হয়নি। আমরা ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিষয়টা জানতে পারি। আমাদের পুরো বোকা বানানো হয়েছে। এটা লজ্জার ব্যাপার হয়ে গেছে। আমরা ব্যাংকটি তদারক করতে ব্যর্থ হয়েছি।’
সাবেক এমডি আব্দুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাখা থেকে নতুন গ্রাহককে ঋণসুবিধা দিতে প্রস্তাব এসেছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়েছি। ওই সময়ে ডলারের সংকট ছিল, পাশাপাশি বেক্সিমকোর রপ্তানি বাড়ছিল। এ জন্য শিল্পপার্কের মধ্যে আরও কারখানা করে গ্রুপটি। রপ্তানি বাড়াতে আমরাও সেখানে অর্থায়ন করি। এসবই এখন আটকে গেছে। গ্রুপটির কারখানা পেশাদারদের দিয়ে চালু রাখলে ও রপ্তানি অব্যাহত থাকলে পুরো টাকা আদায় করা সম্ভব।’
আমরা ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে জানতে চেয়েছি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ কত আছে। পাশাপাশি এটাও জানতে চেয়েছি, প্রকৃত মন্দ ঋণ কত। তারা এসব নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি শিগগির এসব তথ্য জানা যাবে। এরপরই এসব নিয়ে পর্ষদে সিদ্ধান্ত হবেআইএফআইসি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন
আইএফআইসিতেও বেপরোয়া সালমান
একই অবস্থা আইএফআইসি ব্যাংকেরও। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুদিন চুপ ছিলেন। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় ২০২০ সালের পর। ব্যাংকটি থেকে ২০২০ সালে ৪৪০ কোটি টাকা নিলেও ২০২১ সালে কোনো টাকা নেননি। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালে বেপরোয়া আচরণ করেন। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এই সময়ে প্রায় ৩ হাজার টাকা তুলে নেন। এতে ব্যাংকটিতে ৬ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা আটকে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২২ সালে আইএফআইসি ব্যাংক কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে। এই অর্থের বড় অংশ দ্রুত নগদে তুলে নেওয়া হয়। সন্দেহ হওয়ায় ব্যাংকটির এসব ঋণ পরিদর্শনে একটি দলকে পাঠানো হয়। তবে সেই কর্মকর্তারা ব্যাংকটিতে পৌঁছামাত্র সালমান এফ রহমান গভর্নরকে ফোন করে চাপ দেন। পরপরই সেই দলটিকে কাজ না করে ফিরিয়ে আনা হয়। তখনই বুঝতে পারি এই ঋণের সুবিধাভোগী বেক্সিমকো গ্রুপ। এরপর থেকে ব্যাংকটির ওপর তদারকি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।’
সরকার পরিবর্তনের পর সালমান এফ রহমানকে সরিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে জানতে চেয়েছি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ কত আছে। পাশাপাশি এটাও জানতে চেয়েছি, প্রকৃত মন্দ ঋণ কত। তারা এসব নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি শিগগির এসব তথ্য জানা যাবে। এরপরই এসব নিয়ে পর্ষদে সিদ্ধান্ত হবে।’