এবার ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ব্যবসার হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই হিসাব খোলা যাবে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোতে, যার নাম এমএফএস ব্যক্তিক হিসাব। তবে অভিভাবকদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এই হিসাব খুলতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আজ মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে এই হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়ার জন্য সব এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে। এ সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কৌশল হিসেবে দেশের সব জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে আনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিতকরণের পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রসারে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী বিপুলসংখ্যক নবীনকে এমএফএস হিসাব খোলার সুযোগ দিয়ে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে যুক্ত করা সম্ভব। এর ফলে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে। এই প্রেক্ষাপটে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী নবীনদের জন্য এমএফএস ব্যক্তিক হিসাব প্রচলন ও পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
এই হিসাব খোলার উপযুক্ততা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী নবীনরা এমএফএস ব্যক্তিক হিসাব খুলতে পারবে। এ জন্য আগ্রহী ব্যক্তি এবং অভিভাবক বা আইনগত অভিভাবক উভয়কেই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী নবীনদের এমএফএস হিসাব খোলার সময় নিজের এবং অভিভাবক উভয়ের জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর দিতে হবে। এই হিসাব খোলার জন্য অভিভাবকের এমএফএস হিসাবটি বাধ্যতামূলকভাবে লিংকড এমএফএস হিসাব হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পিতা/মাতা/অভিভাবকের এমএফএস হিসাবের মালিকানা নিশ্চিত করে এই হিসাব খুলতে হবে। পিতা/মাতা/আইনগত অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে এমএফএস হিসাব খুলতে হবে। হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাঁদের মোবাইলে একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড পাঠানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে অভিভাবকের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। এসব হিসাবের লেনদেনের তথ্য হিসাবধারীর মোবাইলে পাঠানোর পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের জানাতে হবে। এসব হিসাবে হিসাবগুলো শুধুমাত্র অভিভাবকের এমএফএস হিসাব/ব্যাংক হিসাব/কার্ড/ই-ওয়ালেট থেকে অর্থ জমা করা যাবে। তবে এসব হিসাবে এজেন্ট পয়েন্ট অথবা অন্য কোনো এমএফএস হিসাব/ব্যাংক হিসাব/কার্ড/ই-ওয়ালেট থেকে টাকা জমা করা যাবে না।
এই হিসাবে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ হাজার ও মাসে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা করা যাবে। দিনে ৫ হাজার ও মাসে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা যাবে। এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে দিনে ৫ হাজার ও মাসে ১৫ হাজার টাকা পাঠানো যাবে। নবীনদের হিসাব থেকে বিল পরিশোধ, শিক্ষা ফি, মার্চেন্ট বিল ইত্যাদি পরিশোধ করা যাবে। তবে দিনে ও মাসে সর্বোচ্চ পরিশোধ সীমা হলো যথাক্রমে ৫ হাজার ও মাসে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতি হবে ৩০ হাজার টাকা।
বিকাশ চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৭ সালের মধ্যে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগের আওতায় দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল করার যে লক্ষ্য ঠিক করেছে, সেটি অর্জনে ‘নবীনদের জন্য ব্যক্তিক হিসাব’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিকাশ নিজেও তার নিয়মিত মার্কেট-রিসার্চের অংশ হিসেবে ডিজিটাল-লিটারেসি সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে এবং ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত জনগোষ্ঠী তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের বিশেষ এমএফএস অ্যাকাউন্টের উদ্যোগের সঙ্গে সব সময় রয়েছে।
শেখ মো. মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে এই এমএফএস অ্যাকাউন্ট নতুন প্রজন্মকে যেমন ডিজিটাল পেমেন্টের ইকোসিস্টেমে অভ্যস্ত করে তুলবে, তেমনি ক্যাশবিহীন লেনদেনের অভ্যস্ততা নিশ্চিত করবে। নবীন গ্রাহকদের জন্য ব্যক্তিক অ্যাকাউন্ট খোলার এই সুযোগ বাংলাদেশের এমএফএস খাতের অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।