বিমা খাত

দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেই নীতিমালা জারি

বিএসইসির মতে, নিরপেক্ষ পরিচালক হতে হবে ২০ জনের মধ্যে ৪ জন। অন্যদিকে আইডিআরএর নীতিমালায় রাখা হয়েছে দুজনের বিধান।

একটি বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক থাকবেন আর মোট সংখ্যার কতজন হবেন নিরপেক্ষ পরিচালক—এই দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেই বিমা কোম্পানির, অর্থাৎ বিমাকারীর করপোরেট সুশাসন নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গত বৃহস্পতিবার নীতিমালাটি জারি করে সেদিনই তা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব বিমা কোম্পানির কাছে পাঠিয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) করপোরেট নীতিমালা অনুযায়ী একটি কোম্পানির পর্ষদে এক-পঞ্চমাংশ নিরপেক্ষ পরিচালক থাকতে হয়। সে হিসাবে বিমা কোম্পানির মোট ২০ পরিচালকের মধ্যে নিরপেক্ষ হবেন ৪ জন। কিন্তু নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে মোট পরিচালক থাকবেন সর্বোচ্চ ২০ জন। এর মধ্যে ২ জন থাকবেন নিরপেক্ষ পরিচালক।

এ নীতিমালার মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তির ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমাসেবার পরিধি বিস্তৃত হবে।
জাহাঙ্গীর আলম, মুখপাত্র ও পরিচালক, আইডিআরএ।

নিরপেক্ষ পরিচালকের সংখ্যা একই রকম করা নিয়ে কয়েক বছর ধরে কথা চললেও শেষ পর্যন্ত সেটির সুরাহা ছাড়াই নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে জানিয়ে এর সমালোচনা করেছেন বিমা ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো বিমা কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে ২০ জনের মধ্যে ৪ জন থাকতে হবে নিরপেক্ষ পরিচালক। চারজন না থাকলে বিএসইসির করপোরেট নীতিমালার লঙ্ঘন হবে এবং তা শাস্তিযোগ্য হবে।

বিমাকারী, অর্থাৎ বিমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পেশাদারি, আর্থিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধি ও সুশাসন নিশ্চিতে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এতে বিমা কোম্পানিতে নতুন কতজন পরিচালক থাকবে, কারা হতে পারবেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), তাঁদের কাজ কী হবে, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় তাঁদের ওপর কতটুকু বর্তাবে—এসব উল্লেখ রয়েছে।

আইডিআরএর মুখপাত্র ও পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মকানুন আগেও ছিল, তবে সেগুলো ছিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এখন সেগুলো এক জায়গায় আনা হয়েছে।

চূড়ান্ত করার আগে এটিকে বাস্তবমুখী করতে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয় জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ নীতিমালার মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তির ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমাসেবার পরিধি বিস্তৃত হবে। তবে নিরপেক্ষ পরিচালকের সংখ্যা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

নীতিমালায় বলা হয়, আদালত দেউলিয়া ঘোষণা করেননি এবং বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণখেলাপি সাব্যস্ত হননি, এমন ব্যক্তিরাই বিমা কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন। কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অথবা কোনো জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন বা আছেন—এমন ব্যক্তিরা পরিচালক হতে পারবেন না।

আইডিআরএর নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে বিমা কোম্পানিগুলোর পরিচালক ও তাঁদের নিকট আত্মীয়দের শেয়ার ধারণের বিস্তারিত তথ্য আইডিআরএ জমা দিতে হবে। পরিচালক নিজে অথবা পরিবারের কোনো সদস্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক।

আরও বলা হয়, পর্ষদের প্রধান দায়িত্ব হবে, বিমা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জন এবং কার্যকর ও দক্ষ পরিচালনায় দিকনির্দেশনা দেওয়া ও তদারকি করা। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় নীতি ও করপোরেট সুশাসনকাঠামো তৈরি করতে হবে।

সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও মীর রাশেদ বিন আমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আইডিআরএ এবং বিএসইসি—উভয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালাই পালন করব। আইনে সাংঘর্ষিক কিছু থাকলে আশা করব, সরকার প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করবে।’

কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক, সিইওসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য আচরণ নীতিমালা প্রণয়ন করবে পর্ষদ। সুশাসন নিশ্চিতের জন্য আচরণনীতিতে গোপনীয়তা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, আইন ও বিধিবিধান পরিপালন, কর্মপরিবেশ, কর্মচারী, বিমা গ্রাহক ও অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে একটি বিনিয়োগ কমিটি ও উপকমিটি থাকবে, যারা বিমা গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার ও অংশীদারদের স্বার্থে কোম্পানির বিনিয়োগের সার্বিক বিষয় তদারকি করবে।

বিমা কোম্পানিগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে বিমা আইন সংশোধন করে বিষয়গুলো একই রকম করার দাবি জানিয়ে আসছি। আইন সংশোধনের আগে সব নীতিমালাই আমাদের মানতে হবে।’