৫৮ মামলায় আসামী বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা শেখ আবদুল হাই

দুদক গতকাল ৫৯ মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলেছে, ৫৮টিতেই অভিযুক্ত বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই।

বেসিক ব্যাংকের মতো ভালো একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংককে কেলেঙ্কারিময় ব্যাংকে পরিণত করার হোতা ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। তারপরও তাঁকে সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার।

পরের আট বছর আত্মসাৎ করা অর্থে বাড়ি ও জাহাজ কিনে আরাম-আয়েশেই জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। এ নিয়ে বারবার আদালতের তিরস্কারের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংসদ সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের বিরূপ সমালোচনার পর অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে আসামি হলেন তিনি।

আবদুল হাইসহ ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগপত্র দিচ্ছে ৫৯টি। এর মধ্যে ৫৮টিতেই শেখ আবদুল হাই আসামি। তবে তাঁর দুই মেয়াদের পর্ষদে যাঁরা পরিচালক ছিলেন, তাঁদের কাউকেই আসামি করেনি দুদক। অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রস্তাব গতকাল সোমবার অনুমোদন করেছে দুদক। এখন এগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে। দুদক কার্যালয়ে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

‘এত দিন কেন তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি, এটাই আমার বড় প্রশ্ন। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ ছিল। শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, তিনি এই ব্যাংকে অনিয়মের জন্য দায়ী। বেসিক ব্যাংককে একা ডুবিয়েছেন তিনি। এখন অপেক্ষা করতে হবে, চূড়ান্ত বিচারে কী আসে। তবে এটা ঠিক, আর্থিক খাতের এমন ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হলে অন্যরা শিক্ষা পাবে।’
মইনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
বেসিক ব্যাংক

মামলায় আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করায় দুদকের ওপর কোনো চাপ ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কোনো চাপের মুখে পড়ে কাজ করে না। এ ক্ষেত্রেও কোনো চাপ ছিল না।’

দুই দফায় শেখ আবদুল হাই বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যাংকটি থেকে ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে।

অনুসন্ধানের পর সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় প্রথমে ৫৬টি মামলা করা হয়। পরে মামলা হয় আরও ৩টি। এসব মামলার ১টিতেও এত দিন আসামি ছিলেন না শেখ আবদুল হাই। নিবিড় তদন্তের পর এবার ৫৮টিতেই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে শেখ আবদুল হাইয়ের সম্পৃক্ততা পায় দুদক। দুদকের পাঁচজন কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে সম্প্রতি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় যখন মামলা করা হয়, তখন দুদক চেয়ারম্যান ছিলেন মো. বদিউজ্জামান। তাঁর সময়ে মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তারপর ২০১৬ সালে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়ে ইকবাল মাহমুদ পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করলেও তদন্ত শেষ হয়নি তখনো। বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ২০২১ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এখন বেসিক ব্যাংকের মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়।

আবদুল হাই ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দেয়। বর্তমান সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত।

সে হিসেবে মামলার তদন্ত করে অভিযোগপত্র তৈরি করতে দুদকের আট বছর লেগে যায়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি) এবং বেসিক ব্যাংকেরই নানা প্রতিবেদনে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাইসহ অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ আগেই উঠে আসে।

আবদুল হাই ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দেয়। বর্তমান সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত।

বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় শেখ আবদুল হাই ১১০ কোটি টাকা দিয়ে ঢাকায় দেড় বিঘার একটি বাড়ি কিনেছিলেন। একক কর্তৃত্বে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সেসব ঋণের একটি বড় অংশ ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। সেই টাকা দিয়েই কেনা হয়েছে এই বাড়ি।

শেখ আবদুল হাই ২০০৯ সালে যোগ দেওয়ার সময় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ শতাংশ আর ২০১৪ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ৬৮ শতাংশ। কেলেঙ্কারির পর এখন পর্যন্ত বেসিক ব্যাংককে বাজেট থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকাও দেয় সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য শেখ আবদুল হাইকে সরাসরি দায়ী করলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ও সংসদের বাইরে বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎকে ডাকাতির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারার জন্য তিনি হতাশাও প্রকাশ করতেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার আগে ফজলে নূর তাপস যখন সংসদ সদস্য ছিলেন, তখন ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর আদালতে তিনি বলেছিলেন, ‘শেখ আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। এত বড় কেলেঙ্কারির পর তাঁকে গ্রেপ্তার না করা দুদকের ব্যর্থতা। এ ব্যাপারে দুদকের জবাবদিহি দরকার।’ এ ব্যর্থতার জন্য দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগও চেয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে ধরা পড়ে, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শেখ আবদুল হাই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই দেওয়া হয় নিয়ম ভেঙে। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করে, আর পর্ষদ ভেঙে দিতে ওই বছরের ২৯ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। এর পর ৪ জুলাই অর্থাৎ স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দিন শেখ আবদুল হাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বেসিক ব্যাংককে একা ডুবিয়েছেন তিনি। এখন অপেক্ষা করতে হবে, চূড়ান্ত বিচারে কী আসে। তবে এটা ঠিক, আর্থিক খাতের এমন ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হলে অন্যরা শিক্ষা পাবে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি কারা

আসামির তালিকায় আছেন ব্যাংকের ৪৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ১০১ জন গ্রাহক। শেখ আবদুল হাইয়ের পাশাপাশি অন্য আসামিরা হলেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) কনক কুমার পুরকায়স্থ, মো. সেলিম, এমদাদুল হক, ফজলুস সোবহান, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ কমিটির সদস্যসচিব এ মোনায়েম খান, মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান, শাহজাহান মোল্লা ও মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, উপমহাব্যবস্থাপক খান ইকবাল হাসান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান, ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জালাল উদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী, সহকারী ব্যবস্থাপক এস এম আনিসুর রহমান চৌধুরী, গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শীপার আহমেদ, একই শাখার ঋণ বিভাগের প্রধান এস এম জাহিদ হাসানসহ দিলকুশা শাখা ও স্থানীয় কার্যালয়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।

সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। এ ছাড়া তৎকালীন ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭ টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ও এসব ঋণ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরাও আসামি।

অন্য পরিচালকেরা আসামি নন

তবে কোনো মামলার অভিযোগপত্রে পর্ষদ সদস্যদের কারও নাম নেই এ দফায়ও। শেখ আবদুল হাই বেসিক ব্যাংকে চেয়ারম্যান থাকার সময় পর্ষদ সদস্য ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুই সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) নীলুফার আহমেদ ও শুভাশীষ বসু, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রাজিয়া বেগম, বিসিক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম সচিব কামরুন্নাহার আহমেদ ও বিজয় ভট্টাচার্য। তাঁদের সবাই পদোন্নতি পেয়ে কেউ কেউ সচিব পর্যন্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া পরিচালক ছিলেন আওয়ামী লীগের মুখপত্র মাসিক উত্তরণ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক আনিস আহমেদ, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ কামরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম রেজাউর রহমান, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, সাবেক শুল্ক কমিশনার শাখাওয়াত হোসেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী আখতার হোসেন এবং এআরএস ল্যুভ বাংলাদেশ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি আনোয়ারুল ইসলাম।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচিতে না থাকা বিষয়ও শেখ আবদুল হাই, ব্যাংকের এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম ও তৎকালীন কোম্পানি সচিব পাস করে নিয়ে যেতেন।

ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক এ কে এম রেজাউর রহমান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অভিযোগ দিয়ে জানিয়েছিলেন, ব্যাংকটিতে আবদুল হাই কীসব অপকর্ম করছিলেন। এরপর ওই পরিচালক আর বেসিক ব্যাংকেই ঢুকতে পারেননি।

ঘুষের টাকায় বাচ্চুর বাড়ি ও জাহাজ

বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় শেখ আবদুল হাই ১১০ কোটি টাকা দিয়ে ঢাকায় দেড় বিঘার একটি বাড়ি কিনেছিলেন। একক কর্তৃত্বে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সেসব ঋণের একটি বড় অংশ ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। সেই টাকা দিয়েই কেনা হয়েছে এই বাড়ি।

বাড়িটি কেনা হয় আবদুল হাই, তাঁর স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও ভাইয়ের নামে। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার শহীদ সরণিতে থাকা এই বাড়ির বিক্রেতা বেস্ট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছিল যে অবৈধভাবে ঋণ নেওয়া বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে শেখ আবদুল হাই ও তাঁর ভাই শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্না মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। অর্থাৎ দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে বাড়ি কেনা হলেও সেই বাড়ি কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন ব্যাংকের অন্য গ্রাহকেরা।

বাড়ির দলিল হয় দুটি। একটি দলিল ১৮ কাঠার। এটি হয় শেখ আবদুল হাই, তাঁর স্ত্রী শেখ শিরীন আক্তার এবং ভাই শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্নার নামে। অন্য দলিলটি ১২ দশমিক ২৫ কাঠার। এর দলিল হয় শেখ আবদুল হাইয়ের ছেলে শেখ সাবিদ হাই অনিক ও মেয়ে শেখ রাফা হাইয়ের নামে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে আসে বিডি পাইপস অ্যান্ড পাওয়ার, আখওয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, বাসার এন্টারপ্রাইজ, মিতুল প্রোপার্টিজ, নাইলা প্রোপার্টিজ, যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যালস, সোনার বাংলা ন্যাচারাল, মালিপুর ফ্লাওয়ার মিলস, আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি কোম্পানি থেকে ঘুষ ঢুকেছে শেখ আবদুল হাইয়ের পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানিতে।

দুদকের অনুসন্ধানেই উঠে আসে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার এক বছর দুই মাস পরই শেখ আবদুল হাইয়ের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ইডেন ফিশারিজের নামে ছয়টি এবং তাঁর ভাই শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্নার প্রতিষ্ঠান ক্রাউন ফিশারিজের নামে কেনা হয় দুটি জাহাজ। এসব জাহাজের বাজারদর প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন কেন তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি, এটাই আমার বড় প্রশ্ন। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ ছিল। শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, তিনি এই ব্যাংকে অনিয়মের জন্য দায়ী। বেসিক ব্যাংককে একা ডুবিয়েছেন তিনি। এখন অপেক্ষা করতে হবে, চূড়ান্ত বিচারে কী আসে। তবে এটা ঠিক, আর্থিক খাতের এমন ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হলে অন্যরা শিক্ষা পাবে।’