তিন দিনের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বের আর্থিক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সুইজারর্যান্ডের ক্রেডিট সুইস একীভূত হয়েছে আরেক বৃহৎ ব্যাংকের সঙ্গে।
এবার জানা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের আরও ১৮৬ টি ব্যাংক থেকে অর্ধেক আমানকারী যদি দ্রুত অর্থ তুলে নেন, তাহলে সেই ব্যাংকগুলোও বন্ধ করে দিতে হতে পারে। এন জেড হেরাল্ড পত্রতাকর এই প্রতিবেদনে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত আমানত বিমা করা থাকলেও এই ব্যাংকগুলোতে বিমাবিহীন আমানতের পরিমাণ অনেক বেশি। সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের সূত্রে এনজেড হেরাল্ড বলেছে, এই ১৮৬ টি ব্যাংকের বিমাবিহীন আমানকারীরা আতঙ্কিত হয়ে আমানত তুলে নিতে পারেন।
এ ছাড়া এসব ব্যাংকের সম্পদের বড় একটি অংশ সরকারি বন্ডের মতো অস্থিতিশীল ব্যাংকে রক্ষিত আছে। ফলে সুদহার হ্রাস–বৃদ্ধির কারণে এইসব বন্ড হঠাৎ করে অলাভজনতক হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়।
এসভিবি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ কিন্তু এমন নয় যে তাদের পুঁজি কম ছিল বা তাদের অনুল্লেখিত ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। কিন্তু যেসব ব্যাংকের আমানতের সিংহভাগ বিমাবিহীন ছিল, সেগুলোর শীর্ষ এক শতাংশ ব্যাংকের মধ্যে তারা ছিল একটি।
এসভিবি ধসের মূল কারণ একটিই। সেটা হলো, ঝুঁকি অনুধাবনের অক্ষমতা। গত আট মাস এসভিবাতে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অফিসার ছিলেন না। তাই ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন হয়নি, যদিও আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিপত্র বা ব্যালেন্স শিট ভালো ছিল।
এ ছাড়া আমানত সঞ্চয়কারীদের জন্য সম্পদ হলেও ব্যাংকের জন্য তা দায়। সে রকম ১৭৫ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার দায়ের বিপরীতে এসভি ব্যাংক প্রায় সমপরিমাণ মার্কিন সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ড কিনেছিল, যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। তবে সেগুলোর অধিকাংশই কেনা হয়েছিল কোভিডের সময়, যখন বন্ডের ওপর সুদ ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। কোভিডকালে প্রযুক্তি ফার্মগুলো তাদের বর্ধিত আয় চোখ বন্ধ করে এসভিবিতে রাখতে শুরু করে।
তখন শেয়ারবাজার অনিশ্চিত থাকায় এসভিবি প্রায় সব আমানত সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করে। তখন সেটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হলেও পরের সম্পূর্ণ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে যে পরিবর্তন আনতে হবে, সে কথা খুব একটা ভাবেননি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গ্রেগ বেকার। বন্ডগুলোর বাজারদর ভালো না থাকায় তিনি হয়তো সেগুলোর মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। সেটিই তাঁর কাল হলো। বাজার গুজব ছড়িয়ে পড়ায় আমানতকারীরা এক দিনে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার আমানত তুলে নেন।