ব্যক্তি–আমানতকারীদের টাকা ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দেওয়াসহ ৪ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যক্তি–আমানতকারী ফোরাম। কোম্পানির চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় আমানতকারী ফোরাম। খবর বিজ্ঞপ্তি।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সমন্বয়ক তাসদিক আহমেদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বর্তমান দুরবস্থা ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির জন্য নয়, বরং সরাসরি লুটপাটের জন্য হয়েছে। পি কে হালদার গোষ্ঠী এই লুটপাট করতে পেরেছে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম সরাসরি জনসাধারণের আমানত লুটপাটে এই গোষ্ঠীকে সহায়তা করেছেন। তাঁদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা দরকার।
পি কে হালদার গোষ্ঠীর লুটপাটের পর ২০২০ সালে অবসরপ্রাপ্ত আমলা নজরুল ইসলাম খানকে (এন আই খান) চেয়ারম্যান করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। কিন্তু আমানতকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘ এই চার বছরেও এ পরিচালনা পর্ষদ তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। এন আই খানকে অবিলম্বে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্বল্প সময়ের তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন আমানতকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সমন্বয়ক তাসদিক আহমেদ বলেন, ব্যক্তি–আমানতকারীদের আজীবনের সঞ্চয় ছয় বছর ধরে আটকে আছে। এই সময় ১ হাজার ৪০০ ব্যক্তি–আমানতকারীর সঞ্চয়ের মূল্য অন্তত ৭০ শতাংশ কমেছে। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কারণে ছয় বছর ধরে আমানত ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এর দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উচিত। কিন্তু তা তারা না নিয়ে টাকা উদ্ধারের পুরো দায়িত্ব আমানতকারীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে এবং বলেছে, যখন যে টাকা উদ্ধার হবে, তা আনুপাতিকভাবে দেওয়া হবে। অর্থাৎ টাকা কবে ফেরত পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও যেসব দাবি জানানো হয়, সেগুলো হলো এন আই খানকে বরখাস্ত করে বর্তমান পর্ষদ এখনই ভেঙে দিতে হবে, এস কে সুর ও শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যাতে ব্যক্তি–আমানতকারীদের বক্তব্য শোনেন সে ব্যবস্থা করতে হবে, ব্যক্তি–আমানতকারীদের টাকা এখনই ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে।
২০১৫ সালে শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় হাল ইন্টারন্যাশনাল, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নেচার এন্টারপ্রাইজ ও নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ। এসব প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালেই কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। আবার হাল ইন্টারন্যাশনালের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক পি কে হালদার নিজে; তাঁর ভাই প্রীতিশ কুমার হালদারের শেয়ার ১০ শতাংশ।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নামে-বেনামে টাকা বের করেন পি কে হালদার। এরপর ব্যবস্থাপনায় নিজের পছন্দমতো লোকেদের বসান তিনি। চার পরিচালকের মাধ্যমে ৩৪টি হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তারা ঋণের নামে ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে যান। এসব অনিয়মের জের টানতে হচ্ছে সাধারণ আমানতকারীদের।