আপাতত অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড বা এনবিএল। বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংককে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদ জানিয়েছে, আপাতত তারা অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না।
গত রোববার ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গতকাল সোমবার চেয়ারম্যানসহ নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে আপাতত অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংক আপাতত অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না। আগে যা হওয়ার হয়েছে, আর কোনো লুটপাট হবে না। ব্যাংক থেকে যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে। এক বছরের মধ্যে আমরা ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় নিতে পারব।’ এ সময় তিনি জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করা শুরু করলে চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উঠে যান।
সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্যাংক একীভূত করতে রাজি নই। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এ কথা জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে রাজি হয়েছে। তবে শর্ত দিয়েছে যে এক বছরের মধ্যে ব্যাংককে দুর্বল অবস্থা থেকে ভালো করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান আরও জানান, তাঁরা প্রাথমিকভাবে শেয়ারধারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন সরবরাহ করবেন। এ ছাড়া পরবর্তী সময় আরও তিন হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করবেন। এটা করা হবে প্রচারণা ও প্রকল্পের মাধ্যমে। এতে ন্যাশনাল ব্যাংকের চলমান তারল্য–সংকট নিরসন হবে। খারাপ হয়ে যাওয়া ঋণ পুনরুদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, খারাপ ঋণ পুনরুদ্ধারে কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
ব্যাংকের নবনিযুক্ত পরিচালক আহসানুল করিম বলেন, ‘আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা ন্যাশনাল ব্যাংকে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন দেখতে চাই। অতীতে যাঁরা পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন, তাঁদের নিজেদের স্বার্থ ছিল। এ কারণে তাঁরা নিজেদের স্বার্থে কাজ করে ব্যাংককে দুর্বল করেছেন। আর আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করতে পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব নিয়েছি।’
ব্যাংকটিতে নতুন করে চারজন প্রতিনিধি পরিচালক ও তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাঁদের পরিচয় নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা জানতে চান কে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে পর্ষদে এসেছেন। কিন্তু কেউই এ প্রশ্নের জবাব দেননি।
পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কেওয়াই স্টিল লিমিটেডের পক্ষে রিয়াজুল করীম, স্টিচেস অ্যান্ড ওয়েভ ফ্যাশন লিমিটেডের পক্ষে এরশাদ মাহমুদ, সুন্দরবন কনসোর্টিয়ামের পক্ষে আহসানুল করিম ও ইস্ট কোস্ট হোল্ডিংয়ের পক্ষে এ কে এম তফাজ্জল হক পরিচালক হয়েছেন।
এ ছাড়া ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহরুল হুদা। প্রতিনিধি পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালকদের অনেকেই চট্টগ্রামের বিশেষ একটি গ্রুপ–সমর্থিত বলে ব্যাংক সূত্রে জানা যায়। ফলে প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ সিকদার পরিবার থেকে অন্য কারও কাছে গেল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।