প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এই খাতের নীতিনির্ধারক, ব্যাংকের পরিচালক, ব্যাংকার, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান ও র্যানকন গ্রুপের গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংক খাত সম্পর্কে তাঁর মতামত দেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বা বিএবির মতো একটি সংগঠনের নেতৃত্ব ১৭ বছর এক ব্যক্তির দখলে ছিল। ফলে অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে এটি কাজ করেনি। তাই বিএবিতেও সংস্কার দরকার। সেই উদ্যোগ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু উপকমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সংগঠনটিতে সবার সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই। ব্যাংকের মালিক ও ব্যাংকারদের ওপর অনেক সময় রাজনৈতিক চাপ থাকে। ফলে বাধ্যতামূলকভাবে অনেক কিছু করতে হয়।
আমি অনেক খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে ব্যাংক খাতকেই আমার মনে হয় সবচেয়ে কম প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটি খাত। কারণ, ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশ। আমাদের ব্যাংকের (ব্যাংক এশিয়া) আমানত ৪০ হাজার কোটি টাকা। আমানত ও ঋণের সুদের ব্যবধান থেকে আমাদের আয় হয় দুই হাজার কোটি টাকা। বাকি আয় ট্রেজারি বিনিয়োগ থেকে আসে। ট্রেজারি বিনিয়োগ থেকে আয় দিয়ে ব্যাংকের প্রকৃত পারফরম্যান্স বিবেচনা করা যায় না। জাপানসহ অনেক দেশে আমানত ও ঋণের সুদহারের মধ্যে ব্যবধান ১ শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে সুদহারের ব্যবধানে এত বেশি কেন? আমি মনে করি, তার প্রধান কারণ খেলাপি বা মন্দ ঋণ। বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেশি। আমরা যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করি, তাদের বেশির ভাগই ঋণ ফেরত দিতে নানা সমস্যায় পড়ে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনার কারণে পারফরম্যান্সের বিবেচনায় ব্যাংক থেকে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যায় না। আমাদের ব্যাংকে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে মাসে খরচ হয় ৫০ কোটি টাকা। যদি কর্মীদের দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক চালানো যায়, তাহলে এই খরচ মাসে ৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
আমি মনে করি, ব্যাংকিং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের আশপাশের দেশ ও অঞ্চলের চর্চাগুলোকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন খাতের ভালো ও সফল উদ্যোক্তারা ব্যাংকের পরিচালনায় এসে আর ভালো কিছু করতে পারেন না। এর বড় কারণ রাজনৈতিক চাপ। এ ছাড়া বৈরী পরিবেশ ও নীতিও বড় কারণ। তাই আমি মনে করি, এমন একটি ব্যবস্থা করা দরকার যে শুধু টাকা থাকলেই যে কেউ যাতে ব্যাংকের মালিকানায় চলে আসতে না পারেন। কারা ব্যাংকের মালিকানায় আসতে পারবেন, তার একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা উচিত। তাহলে ব্যাংকিং খাত প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রতিযোগিতা না থাকায় সবাই চড়া সুদে ঋণ বিতরণের পথ বেছে নিচ্ছেন। ঋণগ্রহীতারা ঠেকায় পড়ে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। দিন শেষে অনেকেই তা ফেরত দিতে পারছেন না।
আমার কাছে মনে হয়, ভবিষ্যতে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে ঋণের সুদহার। ১৫ শতাংশ ব্যাংক সুদে শিল্পকারখানা করে সফল হওয়া কঠিন। সুদহার বাড়লে সেটা ব্যাংকারদের জন্য খুশির খবর। কারণ, তাতে সুদ আয় বাড়বে, কিন্তু এর ফলে খেলাপি ঋণও বেড়ে যাবে।
রোমো রউফ চৌধুরী
চেয়ারম্যান, ব্যাংক এশিয়া ও গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র্যানকন গ্রুপ