জীবনকে সহজ করার জন্য যখন থেকে মানুষ কার্ডনির্ভর লেনদেনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছেন, তখন থেকেই বিভিন্ন চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিতে। তাই নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিতে এবং প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করতে প্রতিনিয়ত ই-মেইল, খুদেবার্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারণা-কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকসহ আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
কার্ডনির্ভর লেনদেনকে নিরাপদ করতে গ্রাহককে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুছ সবুর খান। তিনি বলেন, ‘কার্ড হচ্ছে বিপদের বন্ধু। তাই এর নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমি গ্রাহককে চিপযুক্ত কার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেব। বিল মেটানোর জন্য কার্ড সোয়াইপ মেশিনে পিন নম্বর দেওয়ার সময় অবশ্যই আড়ালে দিতে হবে, যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো সুযোগ না নিতে পারেন। এ ছাড়া কার্ড নম্বর, পিন, সিভিভি কিংবা ওটিপি অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার না করার মাধ্যমে গ্রাহক কার্ডনির্ভর লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।’
এ ছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়াতে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শও দিয়েছেন মো. আব্দুছ সবুর খান।
ব্যাংকিং অ্যালার্ট পরিষেবা চালু রাখলে যেকোনো লেনদেনে অ্যালার্ট মেসেজ চলে যাবে গ্রাহকের ফোনে বা ই-মেইলে।
কেনাকাটার ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ড কম ব্যবহার করাই ভালো। কারণ, সোয়াইপ মেশিনে কার্ড রিডার যদি কেউ রাখে, সে ক্ষেত্রে কার্ডের তথ্য কপি হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে একটি ক্লোন কার্ড বানানো সম্ভব।
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মেয়াদ শেষ এমন কার্ড বহন করে বেড়ানো ঠিক নয়। যত্রতত্র এটি ফেলে রাখলে তথ্য চুরির ঝুঁকি তৈরি হয়। আবার যত দ্রুত সম্ভব নতুন কার্ডটি ব্যবহার করে একবার হলেও লেনদেন করতে হবে।
কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটার সময় ওয়েবসাইটে কিছু তথ্য লিখতে হয়। তাই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে যথাযথ সুরক্ষার মাধ্যমে কেনাকাটা হয়।
কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসে ফায়ারওয়াল, অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিস্পাইওয়্যার সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট রাখতে হবে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে গ্রাহকেরা প্রায়ই নানা রকম ভ্রান্তির সম্মুখীন হন। কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে ব্যাংক কার্ড ব্যবহার হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়।
এটা ঠিক নয়। মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে প্রতিটি ক্রেডিট কার্ডেরই ‘স্টেটমেন্ট জেনারেট’ হয়। একবার স্টেটমেন্ট জেনারেট হওয়ার পর থেকে পরের স্টেটমেন্ট জেনারেট হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত দিনসহ ব্যাংকভেদে প্রায় ৫০ দিনের ‘ইন্টারেস্ট ফ্রি’ সময় পাওয়া যায়। অতিরিক্ত দিনে বিল মিটিয়ে দিলে সুদ গুনতে হয় না। তবে এটিএম থেকে ক্যাশ তুললে সে ক্ষেত্রে এই ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড প্রযোজ্য হয় না।
কেনাকাটা বা শপিং করা যাঁদের নেশা হয়ে যায়, তাঁদের বলে ‘শপাহলিক’। এটা একটা মানসিক ব্যাপার এবং সাধারণত আর্থিকভাবে শৃঙ্খলাহীন মানুষই এ রকম অবস্থার শিকার হন। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রায়ই ক্রেডিট কার্ডের লিমিট পেরিয়ে যায়। তাই, ক্রেডিট কার্ড থাকলেই অপ্রয়োজনীয় শপিং থেকে বিরত থাকতে হবে।
একটি কার্ড থাকা অবস্থায় নতুন আরেকটি কার্ডের জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্টরা প্রথম কার্ডের অতীত রেকর্ড নিয়ে একটি ‘হার্ড এনকোয়ারি’ করে। কম সময়ের ব্যবধানে যদি একাধিক কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়, শুধু তখনই ক্রেডিট স্কোরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্নরকম কার্ডে আলাদা আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তা ছাড়া একাধিক কার্ড ব্যবহার করলে ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন সমীকরণও কমে যায় এবং ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে সাহায্য করে। তবে একাধিক কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে খরচ বাড়িয়ে ফেলাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
ক্রেডিট লিমিট বাড়ানোর অফার পেলে প্রয়োজন না থাকলেও সেটা গ্রহণ করে লিমিট বাড়িয়ে নেওয়া ভালো। কারণ, বেশি টাকার দরকারের সময় বাড়ানো ক্রেডিট লিমিটটা কাজে দেবে।
কার্ড ক্যানসেল করলে সামগ্রিক ক্রেডিট লিমিট কমে যায় এবং তার সঙ্গে বেড়ে যায় ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও, যেটা ক্রেডিট স্কোরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। পুরোনো কার্ড ব্যবহার না হলে সেটা এমনি ফেলে রাখা বা নষ্ট করে দেওয়াই ভালো বিকল্প।