যুক্তরাষ্ট্রের সোনালী এক্সচেঞ্জ গতকাল প্রতি ডলার ১১০ টাকা দিয়ে কিনেছে। এটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তবে দেশের অন্য ব্যাংকের কাছেও ডলার বিক্রি করে সোনালী এক্সচেঞ্জ।
একইভাবে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকও ১০৯-১১০ টাকা দিয়ে ডলার এনেছে বিদেশের রেমিট্যান্স হাউস থেকে। তবে বেসরকারি বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার কিনতে ১০৬ টাকার বেশি দিতে চাইছে না।
ডলার সংগ্রহে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ট্রেজারি প্রধানদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ নেওয়ার পর। তবে এরপরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়নি। দামও সেভাবে কমছে না।
ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয় নগদায়ন করেছে ১০৩-১০৪ টাকার মধ্যে। ফলে আমদানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য ১০৫ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ডলারের দাম ৯৫ টাকায় রয়ে গেছে। এই দামে গতকাল রিজার্ভ থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাজ্যের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলো গতকাল ১০৫-১১০ টাকা দামের মধ্যে ডলার কেনার আগ্রহ দেখায়। ফলে যারা বেশি দাম দিয়েছে, তারাই ডলার পেয়েছে।
ডলারের সংকট নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা। তাঁরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে চাইবে, সেভাবেই চলবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আমদানি খরচ হঠাৎ বেড়ে গেছে। সেই অনুযায়ী রপ্তানি আয় বাড়েনি। বরং কমে গেছে প্রবাসী আয়। রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে বেড়ে গেছে দামও। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত চার মাসে ডলারের দাম ৮৬ থেকে ৯৫ টাকায় নিয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোতে দাম বেড়েছে আরও ১০ টাকার বেশি। ফলে বেড়ে গেছে খাদ্যসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের দাম।
মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাজ্যের মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলো গতকাল ১০৫-১১০ টাকা দামের মধ্যে ডলার কেনার আগ্রহ দেখায়। ফলে যারা বেশি দাম দিয়েছে, তারাই ডলার পেয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীরা নির্দিষ্ট কোনো ব্যাংকে অর্থ পাঠাতে চাইলে সেই ব্যাংকের দাম অনুযায়ী টাকা পেয়েছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন।
আর রেমিট্যান্স মানিগ্রাম ডলার কিনেছে ১০৯ টাকা দিয়ে, স্মল ওয়ার্ল্ড কিনেছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কিনেছে ১০৫ টাকা ৮০ পয়সায়।
বেসরকারি বেশির ভাগ ব্যাংক ডলারে ১০৫ টাকার বেশি না দিলেও ইসলামী ব্যাংক ঠিকই ১১০ টাকা ৫০ পয়সা, আল-আরাফাহ ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক ১০৭ টাকা দাম দিয়েছে।
ডলার–সংকট কাটাতে আমদানি ঋণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণপত্র খোলায় নজরদারি বাড়িয়েছে। আবার ব্যাংকগুলোকে প্রতি ডলারে মুনাফায় সর্বোচ্চ ১ টাকা সীমা বেঁধে দিয়েছে। এ ফলে ঋণপত্র খোলা কমেছে। এরপরও বাগে আসছে না ডলারের দাম।
তবে অর্থনীতিবিদেরা আনুষ্ঠানিক ডলারের দাম আরও বাড়ানোর পক্ষে। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলারের দাম ৯৫ টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১০৫ টাকা। এই পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। না হলে সংকট আরও বাড়বে। এ জন্য দাম আরও বাড়াতে হবে।
এদিকে গতকাল খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারগুলোতে প্রতি ডলার ১০৮-১০৯ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। নগদ ডলারের দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মানি চেঞ্জারগুলোর ব্যাংকের নগদ ডলারের চেয়ে সর্বোচ্চ আড়াই টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। গতকাল জনতা ব্যাংকে নগদ ডলারের দাম ছিল ১০৪ টাকা। এদিকে মানি চেঞ্জার পরিদর্শনে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় ২৮টি মানি চেঞ্জারের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।