বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সিংহভাগ অর্থের প্রধান গন্তব্য ও সুবধিাভোগী হলো ধনী ও উন্নত দেশগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক দলের অনেকের এসব দেশে সম্পদ অর্জনের খবর উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাচার হওয়া অর্থসম্পদ বাংলাদেশে ফেরাতে সহায়তার জন্য এসব দেশকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি।
আজ বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডের পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও অনেক “অফশোর” দ্বীপ অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। অর্থ পাচারের এসব গন্তব্যে অত্যন্ত দক্ষ আইন সংস্থা, ট্রাস্ট কোম্পানি, অফশোর বিশেষজ্ঞ, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, হিসাবরক্ষক, নিয়ন্ত্রক বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা সংস্থার শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অর্থ পাচারের জন্য গোপন চুক্তিসমূহ সম্পন্ন করে থাকে। এই সিন্ডিকেটগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারীদের জন্য অর্থ পাচারকে সহজ করে তুলছে। তারা অর্থ পাচারকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে রিয়েল এস্টেট, ব্যাংকিং এবং বিলাসবহুল পণ্যে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিমালায় ঘাটতির সুযোগ নিয়ে অর্থ পাচার করা হয়। এমন অনেক দেশ রয়েছে, যারা পাচার করা অর্থ ট্রাস্ট, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ এমনকি বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব পর্যন্ত দিয়ে থাকে। যদি নীতি ঘাটতি না–ও থাকে, তাহলে আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাবে অর্থ পাচারে সহায়তাকারীদের জন্য ‘স্বর্গ’ তৈরিতে সাহায্য করে এবং এই সুযোগ সৃষ্টির ফলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে।’
এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দুবাই এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোর সরকারের প্রতি টিআইবি আহ্বান জানিয়েছে—বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অবৈধ সম্পদ তাদের নিজস্ব আইনে চিহ্নিত ও অবরুদ্ধ ফ্রিজ করা; অবৈধ স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থ ও সম্পদ আহরণকারী সিন্ডিকেট বিলুপ্তির জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ; চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ শুরু ও তা ত্বরান্বিত করা এবং পারস্পরিক আইনি ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মতো আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অর্থ পাচারকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা; বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থা, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবআির) এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের প্রয়োজনীয় পেশাদারত্ব এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা তৈরিতে অবদান রাখা এবং এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা এবং সমন্বয় করা।
টিআইবি মনে করে অর্থ পাচার প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের কাঁধে। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ যেসব দেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং পাচার হওয়া অর্থ যাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে, এমন দেশ বা অঞ্চলের দায়িত্বও কম নয়।