বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন রিজার্ভের পরিমাণ ৪ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। তিন মাসের আমদানিতে খরচ হবে ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। পাশাপাশি সরকারের জরুরি খাদ্যের জন্য খরচ হতে পারে ৩০০ কোটি ডলার। ফলে দেশের যে পরিমাণ ডলার প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
‘বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউর ২০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে শনিবার সন্ধ্যায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি করোনা–পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য তিনি ব্যাংকারদের ব্যবসার চেয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অর্থ পাচার প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ে ব্যাংকারদের সতর্ক করে দিয়ে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, নিয়মকানুন মানার চেয়ে না মানার পরিণতি অনেক বেশি। এ জন্য তিনি সবাইকে নিয়মের মধ্যে থাকার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছে বিএফআইইউ। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা একটি জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে তদন্তাধীন ৯টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা ২৭ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে।
এদিকে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, দুই দশকের মধ্যে গত বছরই বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয়েছে। ২০২১ সালে বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ৯৫ টাকা ধরে)। আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সেই দেশের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। ব্যাংকগুলোর পক্ষে বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুবউর রহমান, ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী ও দি সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।