রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংককে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারের তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সম্পদ দায় ব্যবস্থাপনায় পেশাদার আচরণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা না থাকলে তাদের আমানত সংগ্রহে অতি উৎসাহী না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
গতকাল সোমবার সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের সঙ্গে এক সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে চলতি বছরের জুনভিত্তিক তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ, রূপালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদসহ ব্যাংক চারটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় সন্তোষজনক নয়। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে সোনালী ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৫০ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা। একই সময়ে জনতা ব্যাংক ৮০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭ কোটি টাকা, অগ্রণী ২৪০ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৬ কোটি টাকা এবং রূপালী ২২০ টাকার বিপরীতে মাত্র ৩৮ লাখ টাকা আদায় করেছে।
তবে অন্য খেলাপিদের কাছ থেকে সোনালী, অগ্রণী ও রূপালীর আদায় সন্তোষজনক। ৬ মাসে সোনালী ২৫ শতাংশ, অগ্রণী ১৯ শতাংশ ও রূপালী ১৬ শতাংশ আদায় করেছে। আর জনতা ব্যাংকের আদায় হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ।
সভায় বলা হয়, খেলাপি ঋণ আদায়, মূলধন ঘাটতি পূরণসহ বিভিন্ন সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে জনতা ব্যাংক। এরপরই সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক।
তবে আশ্চর্যজনক হলো, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি নিট মুনাফা করেছে জনতা ব্যাংক। এই সময়ে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করে ৩৭১ কোটি টাকা। অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংক ১৩২ কোটি টাকা, সোনালী ৯০ কোটি ও রূপালী ১২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।
সভায় ব্যাংকগুলো জানায়, ঋণ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড় দেওয়ার কারণে গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধ করছে না। এর ফলে ঋণ আদায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। একই কারণে সার্বিক সূচক খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে ঋণ পরিশোধে ছাড় চলছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। এরপরও তাদের তদারকি জোরদার করতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ পরিকল্পনা না থাকলেও আমানত সংগ্রহে জোর দিচ্ছে। এ বিষয়ে পেশাদার আচরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমানত যাতে ব্যাংকগুলোর জন্য কাল হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে।