মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের টাকা দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের নামে জমা রয়েছে। এই টাকার লেনদেনে ডাক বিভাগের সম্মতি নিশ্চিত করতে দেশের ৩৩টি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিদিনের লেনদেনের পর গ্রাহকের হিসাবের বিপুল অর্থ জমা থাকে। সেই টাকা থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
নগদ চালু করা হয়েছে ডাক বিভাগের অধীনে। যার মালিকানার সঙ্গে ডাক বিভাগের পাশাপাশি রয়েছে থার্ড ওয়েভ। কিন্তু নগদের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যাংকে টাকা জমা রয়েছে থার্ড ওয়েভের নামে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে নগদের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের নিয়ন্ত্রণ বা সম্মতি নিশ্চিত করার। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডাক বিভাগ ও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নগদে গ্রাহক হিসাবের বিপরীতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা জমা রয়েছে, যা বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি ও স্থায়ী আমানত হিসাবে রেখেছে থার্ড ওয়েভ। অর্থাৎ গ্রাহকের টাকা ব্যাংকে জমা হচ্ছে থার্ড ওয়েভের নামে। তার বিপরীতে সুদও পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের সব টাকা ডাক বিভাগের নামে জমা করতে বলেছে। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগদ পরিচালনায় আলাদা কোম্পানি গঠন করা হবে। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। আলাদা কোম্পানি হলে তার নামেই সব টাকা জমা হবে।’
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা হিসেবে নগদের কার্যক্রম শুরু হয়। পোস্ট অফিস আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে নগদের সেবা। সাধারণত যেকোনো আর্থিক লেনদেননির্ভর সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু নগদ এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। তবে নগদ ও ডাক বিভাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের এপ্রিলে নগদকে ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দেয়। এতে বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে, নগদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডাক বিভাগের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে। ডাক বিভাগের নামে পরিচালিত হিসাবে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করা যাবে। শুধু ডাক বিভাগের নামে জমা হিসাবের সমপরিমাণ ই-মানি ইস্যু করা যাবে, যা নিশ্চিত করবে ডাক বিভাগ। মাস শেষে নগদের লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও ছয় মাস সময় বাড়ায়, যা আগামী মাসে শেষ হবে।
এদিকে, হিসাব পরিচালনাসংক্রান্ত নগদের বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখেছে, লেনদেনের সব টাকা থার্ড ওয়েভের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হচ্ছে। এতে ডাক বিভাগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্য থার্ড ওয়েভের নামে আর্থিক লেনদেনের হিসাবকে নগদের ‘ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করার। পাশাপাশি লেনদেনের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের সম্মতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সাত দিনের মধ্যে জানাতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নগদের যে টাকা ব্যাংকে আছে, সেখানে ডাক বিভাগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই টাকার লেনদেনে ডাক বিভাগের সম্মতি থাকতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম
দেশের এক প্রান্ত থেকে মোবাইলের মাধ্যমে অন্য যেকোনো প্রান্তে টাকা পাঠানোর কাজটি কীভাবে চলবে, এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালাটি মেনে বিকাশ, রকেটসহ ১৬টি এমএফএস সেবা পরিচালিত হচ্ছে। নীতিমালায় লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংক-পরিচালিত (ব্যাংক-লেড) মডেল অনুসরণের কথা বলা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কার্যবিধি (রুলস অব বিজনেস) সংশোধন করে নগদকে আর্থিক সেবা হিসেবে বাজারে আসার সুযোগ করে দেয়। তার ভিত্তিতেই এরপর ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ কার্যক্রম শুরু করে নগদ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগদের যে টাকা ব্যাংকে আছে, সেখানে ডাক বিভাগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই টাকার লেনদেনে ডাক বিভাগের সম্মতি থাকতে হবে। কারণ, সেবাটি ডাক বিভাগের বলে আমরা জানি। তাই আমরা বলেছি লেনদেনের বিষয়ে ডাক বিভাগের সম্মতি লাগবে। আমরা যে শর্তে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছি, তাতেও এটা ছিল। এটা পরিপালন করতেই হবে।’
যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে গত ডিসেম্বরে সংগ্রহ করা নথিপত্রে দেখা গেছে, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের নাম পরিবর্তন করে ‘নগদ’ হয়ে গেছে। আর মালিকানায় রয়েছেন থার্ড ওয়েভের পরিচালকেরাই।