জানুয়ারিতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি টাকা স্থানান্তর ছিল ১০,০৭৭ কোটি টাকা, জুলাইয়ে যা বেড়ে হয়েছে ১৭,২৯৩ কোটি টাকা
মার্চেন্ট লেনদেন ৬২৫ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১,১৩৫ কোটি টাকা
সরকারি ভাতা ১৫২ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১,০৭৬ কোটি টাকা
বেতন পরিশোধ ১,০৮৩ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৪,৫৮৭ কোটি টাকা
পরিষেবা বিল পরিশোধ ৪৭২ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৭৮ কোটি টাকা
ঘরে থেকেই এখন ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহকসম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই হিসাব খোলা যায়। রয়েছে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলার সুযোগ। আর বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল ফোনে রিচার্জ এবং কাউকে টাকা পাঠানো প্রভৃতি লেনদেনও করা যাচ্ছে ঘরে বসে। এর সবই সম্ভব হয়েছে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) সুযোগ হাতের নাগালে পৌঁছে যাওয়ায়।
আর এসব সেবার প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহার সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে। যেমন, গত জুলাই মাসে আগের যেকোনো এক মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। সক্রিয় হিসাব খোলা ও এজেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশির ভাগ লেনদেনই আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে সেবাগুলোর ওপর মানুষের নির্ভরতা বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের সেবা নগদের মাধ্যমেও করোনাকালে লেনদেন যথেষ্ট বেড়েছে। এ ছাড়া পোশাকশ্রমিকদের বেতন ও কাজ হারানো মানুষজনকে সরকারি ভাতার টাকাও দেওয়া হয় এসব সেবার মাধ্যমে। ফলে এসব সেবার ওপর দিন দিন মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে।
জুলাইয়ে কেনাকাটা ও বিভিন্ন বিল পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ৮১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘরে বসে কেনাকাটা করার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনাকালের এক মাসের ব্যবধানে জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ বেশ বেড়েছে। এই মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুনে লেনদেন হয়েছিল ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। জুলাইয়ে ৩১ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৩৮০টি লেনদেন হয়েছিল। এই সংখ্যা জুনে ছিল ২৫ কোটি ৬০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭২টি। টাকা জমা, টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, পরিশোধ, বিল পরিশোধ—সবকিছু মিলেই হিসাব হয় লেনদেনের।
দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদাতা হলো ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। জুলাইয়ে বিকাশের লেনদেন বেড়েছে। জুনে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৩৩ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, সেখানে জুলাইয়ে তা বেড়ে ৪৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। দেশের ২০টি ব্যাংক থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে বিকাশ হিসাবের মাধ্যমে। কিছু ব্যাংকের টাকা ও ক্রেডিট কার্ড বিলও বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া যায়। এ ছাড়া অন্য সব লেনদেন তো রয়েছেই।
ব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে। এ জন্য গ্রাহকেরা আগের চেয়ে এমএফএসে বেশি ঝুঁকছে। আমরাও নতুন নতুন সেবা যুক্ত করছি। এতে নতুন গ্রাহক বাড়ছে। একইভাবে রকেট, শিওর ক্যাশের ব্যবহারও বেড়েছে।শামসুদ্দিন হায়দার, প্রধান (যোগাযোগ বিভাগ), বিকাশ
বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে। এ জন্য গ্রাহকেরা আগের চেয়ে এমএফএসে বেশি ঝুঁকছে। আমরাও নতুন নতুন সেবা যুক্ত করছি। এতে নতুন গ্রাহক বাড়ছে। একইভাবে রকেট, শিওর ক্যাশের ব্যবহারও বেড়েছে।’
চলতি বছরের জুলাই শেষে এ খাতে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার, যা জুনে ছিল ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার। জুলাই শেষে সক্রিয় গ্রাহক ছিল ৪ কোটি ২৬ লাখ, আগের মাস জুনে যা ছিল ৩ কোটি ৮৫ লাখ। জুলাইয়ে গ্রাহকদের এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে টাকা স্থানান্তরের পরিমাণও বেশ বেড়েছে। জুলাইয়ে তাঁরা টাকা স্থানান্তর করেন ১৭ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ১৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
জুলাইয়ে কেনাকাটা ও বিভিন্ন বিল পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ৮১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘরে বসে কেনাকাটা করার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে।
সরকার এসব সেবার মাধ্যমে নাগরিকদের ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা ভাতা দিয়েছে, যা জুনে ছিল ৩৫৮ কোটি টাকা। সরকারি ভাতা পরিশোধে এখন মূলত বিকাশ, রকেট বেশি ব্যবহার হচ্ছে।
জুলাইয়ে বেতন পরিশোধ করা হয় ৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, যা জুনে ছিল ২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। তবে মোবাইল রিচার্জ ও পরিষেবা বিল পরিশোধ খুব একটা বাড়েনি।
করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধে নগদের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে জুলাইয়ে আমাদের লেনদেন ৪২ শতাংশ বেড়েছে। নগদ–এর সেবা মানুষের জীবন সহজ করে দিচ্ছে, ফলে এর ব্যবহার বাড়তেই থাকবে।তানভীর আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নগদ
বিকাশ, রকেট ও শিওর ক্যাশের মতো ডাক বিভাগের সেবা নগদের ব্যবহারও বেশ বেড়েছে। জুলাইয়ে নগদের সক্রিয় হিসাব সংখ্যা ৩৫ শতাংশ ও লেনদেন ৪২ শতাংশ বেড়েছে। তবে সরকারি ভাতা ও মার্চেন্ট লেনদেনে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে নগদের।
জানতে চাইলে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামীণফোন ও রবির গ্রাহকেরা খুব সহজেই নগদের গ্রাহক হতে পারছেন। ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকেও সহজেই নগদ হিসাবে টাকা আনা যাচ্ছে। আর করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধে নগদের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে জুলাইয়ে আমাদের লেনদেন ৪২ শতাংশ বেড়েছে। নগদ–এর সেবা মানুষের জীবন সহজ করে দিচ্ছে, ফলে এর ব্যবহার বাড়তেই থাকবে।’