করোনায় মারা গেছেন মোট ১৮৬ জন ব্যাংকার। ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ৬১ জনের পরিবার। বাকি ১২৫ জনের পরিবারকে রোববারের মধ্যে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ।
করোনাভাইরাসে বিভিন্ন ব্যাংকের মারা যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। আর ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ৬১ জনের পরিবার।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পিছিয়ে পড়েছে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ অক্টোবর রোববারের মধ্যে অবশিষ্ট সব পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত এপ্রিলে এক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যাংকার মারা গেলে তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ বাবদ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পাবে। ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার থেকে অফিসারের নিচের পদমর্যাদার কর্মকর্তার পরিবার পাবে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কোনো কর্মচারী মারা গেলে তাঁর পরিবার পাবে ২৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় মারা যাওয়া ব্যাংকারদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা মানবিক বিষয়। এটা নিয়ে ব্যাংকগুলো দীর্ঘসূত্রতা করবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
জানা গেছে, করোনা মহামারি শুরুর পর গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩ হাজার ৩৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৮৬ জন। গত কয়েক মাসে অবশ্য আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে মারা গেছেন একজন ব্যাংকার।
ব্যাংকারদের মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব ব্যাংকে গ্রাহকের ভিড় যত বেশি, সেগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যাও তত বেশি হয়েছে। তবে যেসব ব্যাংক করোনা প্রতিরোধে বেশি ব্যবস্থা নিয়েছে, তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের বেশি সুরক্ষিত রাখতে পেরেছেন।
করোনায় সরকারি ব্যাংকের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। কারণ, সরকারি ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন বেতন-ভাতা তোলার জন্য সাধারণ মানুষের বেশি ভিড় থাকে। আবার সরকারি ব্যাংকগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাও যথেষ্ট ছিল না। তবে করোনার শুরু থেকেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়। কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংক করোনার মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি গ্রাহককে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। পাশাপাশি অনলাইন ব্যাংকিং সেবাও জোরদার করেছে তারা।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনার কারণে সর্বোচ্চ ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের মারা গেছেন ২০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ১৭ জন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ১৩ জন, অগ্রণী ব্যাংক ১৫ জন ও ইসলামী ব্যাংক ১১ জনকে হারিয়েছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭ জন এবং রূপালী, ইউসিবিএল ও উত্তরা ব্যাংকের ৬ জন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় মারা যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে আমরা মহাব্যবস্থাপকদের ক্ষমতা দিয়েছি। এর ফলে ক্ষতিপূরণের কোনো অনুমোদন আটকে থাকছে না। ইতিমধ্যে ২৬ জনের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কারা ক্ষতিপূরণ নেবে, তা নির্ধারিত না হওয়ায় বাকিদেরটা আটকে গেছে। যাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য, তাদের নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হবে।’
ব্যাংক কর্মীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যান বেসরকারি সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজতবা শাহরিয়ার (৪০)। গত বছরের ২৬ এপ্রিল মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জন।