আপনার টাকা

বিনিয়োগ করতে পারেন ট্রেজারি বন্ডে

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এই বন্ডে। ২০১৯ সালের জুনেও যা ছিল ৪০৫ কোটি টাকা। ফলে করোনাকালে এ বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

ব্যাংকে যখন সুদ কম, তখন টাকা কোথায় রাখবেন—এমন প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ, সবাই চান বেশি সুদ। পাশাপাশি টাকার নিরাপত্তা। যাতে চাহিবামাত্র ফেরত পাওয়া যায়। টাকাও নিরাপদ থাকবে, আবার ভালো মুনাফাও পাওয়া যাবে—এমন আর্থিক পণ্য দেশে খুব বেশি নেই। সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়ের জন্য প্রথম পছন্দ সঞ্চয়পত্র। এরপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিম। সঞ্চয়পত্রে একজন একক নামে ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারেন না।

ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের বাইরে সরকারের আরও একটি আর্থিক পণ্য রয়েছে, যেখানে আপনি টাকা খাটাতে পারেন। সেটি হলো সরকারি ট্রেজারি বন্ড। এই বন্ডে বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা আসবে, তার ওপর কোনো কর দিতে হয় না। ফলে মুনাফার পুরোটাই ভোগ করার সুযোগ আছে। তাই ট্রেজারি বন্ড হতে পারে নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা।

এখন দেশের প্রতিটি ব্যাংক থেকে ‘সিকিউরিটি হিসাব’ খোলার মাধ্যমে এ বন্ড কেনা যায়। তবে এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে কমপক্ষে এক লাখ টাকা বা এর গুণিতক। আর চাইলে যখন-তখন বিক্রিও করে দেওয়া যায়। কারণ, এসব বন্ড এখন স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নিয়মিত লেনদেনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ের প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে। ২০১৯ সালে জুনেও যার পরিমাণ ছিল ৪০৫ কোটি টাকা। ফলে করোনাকালে এ বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে।

টাকার জোগানে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, আবার বিল ও বন্ডের মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করে। সরকার এসব টাকা খরচ করে দেশের উন্নয়নে, কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়।

তবে সরকারি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার সঞ্চয়পত্রের মতো নয়, কিছুটা কম। এখন বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদ ৪ দশমিক ১৮ থেকে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে এখন ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের কুপন হার ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদি বন্ডের কুপন হার ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে তা ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে এ হার ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

জানা গেছে, গত জুন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ ছিল। ২০১৯ সালের জুনে বিনিয়োগ ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালের জুনে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬০১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরাও এখন ট্রেজারি বন্ড কিনছেন। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন, এ জন্য নিয়মকানুন সহজ করা হয়েছে।

ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর বাইরে সরকারের বিল ও বন্ডে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলো, প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এরপরই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রাইমারি ডিলার নয় এমন বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ট্রেজারি বন্ডে এসব ব্যাংকের ১ লাখ ৩ হাজার ৭০৭৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ২৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা, আমানত বিমা ট্রাস্টের রয়েছে ১০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর ৩০২ কোটি টাকা, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর ১৮ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা, বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, প্রভিডেন্ট, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের ৮ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ফান্ডের ২৫১ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের ২৭ কোটি টাকা। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের আয় যেমন করমুক্ত, ঠিক তেমনি এই টাকার হিসাবও সরকারি কোনো সংস্থা নেয় না। ফলে আপনি চাইলেই যেকোনো ব্যাংক শাখায় গিয়ে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।