পদ্মা ব্যাংককে (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) বাঁচিয়ে রাখতে এবার আর্থিক প্রতিবেদনে ‘তথ্য গোপন’ রাখার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনে থাকবে না কোনো লোকসানের তথ্য। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে ব্যাংকটিকে এ সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে ব্যাংকটি বন্ধের সম্মুখীন হলে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো মূলধন জোগান দেয়। পরে ব্যাংকটি ফারমার্স থেকে নাম বদলে পদ্মা ব্যাংক নামকরণ করে। পাশাপাশি ব্যাংকটিকে বেশ কিছু নীতি ছাড় দেওয়া হয়। নগদ অংশ সংরক্ষণ বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট) ও বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআরের (স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও) অর্থ জমা রাখার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মওকুফ করা হয় দণ্ড—সুদ ও জরিমানা। এখন নতুন করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আর কত ছাড় দেওয়া হবে?
শুরুতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তাঁর মেয়াদেই নতুন ব্যাংকটি নানা ধরনের ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে ধ্বংসের মুখে পড়ে। পরে সরকারের নির্দেশে সরকারি ব্যাংকগুলো ওই ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়। পরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
জানা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি পদ্মা ব্যাংকে ৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর অর্ধেক বিনিয়োগ হবে মূলধন হিসেবে। বাকি অর্ধেক হবে বন্ড বা অন্য উপায়ে। এ বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন ‘স্বচ্ছ’ দেখাতে চায় পদ্মা ব্যাংক।
এ জন্য ৯০০ কোটি টাকার বেশি লোকসানে থাকা পদ্মা ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে এ লোকসান দেখাতে হবে না। লোকসানের বিপরীতে ‘ইনটেনজিবল অ্যাসেট বা অদৃশ্য সম্পদ’ সৃষ্টি করা হবে। আগামী ১০ বছরের মুনাফা থেকে যা সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া লোকসান সমন্বয়ের সময়সীমা পর্যন্ত ১০ বছর ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। তবে বিদেশি বিনিয়োগ না এলে এ সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পদ্মা ব্যাংক বিদেশি বিনিয়োগ আনার কথা বলেছে। বিনিয়োগ আনার স্বার্থে শর্ত সাপেক্ষে ব্যাংকটির লোকসান সমন্বয়ে ১০ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ না এলে এ সুবিধা বাতিল হবে।
ফারমার্স ব্যাংক নাম থাকাকালে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধনের জোগান দেয়। ফলে ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশই সরকারি ব্যাংকের হাতে।
ব্যাংকটিকে দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়ের বিষয়ে জানতে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।