দেশে শরিয়াহভিত্তিক ৮ হাজার কোটি টাকার প্রথম ইসলামি বন্ড বাজারে আসছে। প্রথমবারের মতো সরকার এ বন্ড ছাড়তে যাচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ বন্ড বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। সুকুক ছাড়ার জন্যই এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক সুকুক বন্ড ইস্যু করবে। শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড সাধারণত ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। এখন থেকে সুকুক হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যে অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে।
জানা গেছে, এই বন্ড ছাড়তে সরকার গত অক্টোবরে প্রথমবারের মতো নীতিমালা করেছে। তার আওতায় বন্ড ইস্যুর চুক্তি হয়েছে গতকাল। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’-এর সম্পদের বিপরীতে ছাড়া হচ্ছে এই সুকুক। বাংলাদেশ ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের কাছে সুকুকের সার্টিফিকেট বিক্রি করবে। বিপরীতে তারা মুনাফা পাবে।
প্রচলিত বন্ড ও সুকুক বন্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। প্রচলিত বন্ডে সুদ, ফাটকা ইত্যাদি থাকায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, পুরো ব্যাংক ব্যবস্থায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অংশীদারত্ব প্রায় ২৫ শতাংশ। অথচ সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে দেশে শরিয়াহভিত্তিক কোনো উপকরণ নেই। ফলে একদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকতর নিরাপদ এ খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছে, অন্যদিকে সরকার তার ঘাটতি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যবহার করতে পারছে না। ঘাটতি অর্থায়ন সুকুকের মাধ্যমে করা হলে সরকারের সুদের ব্যয়ও কমবে।
প্রচলিত বন্ড ও সুকুক বন্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। প্রচলিত বন্ডে সুদ, ফাটকা ইত্যাদি থাকায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান।
সুকুক চালুর পক্ষে অর্থ বিভাগের যুক্তি হচ্ছে, অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অত্যন্ত বেশি, যা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আশা করা যায় না। এ কাজ করতে যে ঘাটতি অর্থায়ন করতে হয়, সরকার এখন পর্যন্ত তা করে আসছে প্রচলিত ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা থেকে। অথচ এ প্রক্রিয়ায় ইসলামি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও শরিক হতে পারে।
সুকুকের মাধ্যমে অর্থায়নের জন্য ৬৮টি প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি করেছিল অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের জন্যই টাকা লাগবে ১২ হাজার কোটি। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার ৫টি, ৪০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার ১২টি এবং ২০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ৪৬টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।
দেশে ইসলামি ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংকগুলোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজ হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) সুকুক প্রচলিত আছে।
সুকুক ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সুকুক প্রচলিত। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এখন সুকুক চালু রয়েছে।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা থমসন রয়টার্সের ২০১৬-১৭ সময়ে প্রকাশ করা ‘বৈশ্বিক ইসলামি অর্থনৈতিক প্রতিবেদন’ অনুযায়ী ২০১৫ সালে বৈশ্বিক ইসলামি অর্থায়নের সম্পদের পরিমাণ ছিল দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার। বলা হয়, ইসলামি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এতই ইতিবাচক যে ২০২১ সালেই তা সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।