এনআরবিসিকে জরিমানা, আরও ১২ ব্যাংককে সতর্ক

আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন আরও সিদ্ধান্ত আসবে।

শেয়ারবাজারে নির্ধারিত সীমার বেশি বিনিয়োগ করায় বেসরকারি খাতের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংককে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে গত ১১ আগস্ট। তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে।

প্রচলিত ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করায় ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিশেষ তহবিলের টাকা নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করায় আরও ১২ ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের বিনিয়োগের চিত্র খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, একটি ব্যাংক শেয়ারবাজারে কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে, তা আইনেই বলা আছে। সেই সীমার বেশি বিনিয়োগ করেছে এনআরবিসি। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা বিনিয়োগসীমা লঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই ব্যাখ্যা চেয়ে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারবাজারে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। তবে গত জুলাই মাসে একক ভিত্তিতে এনআরবিসি ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২৫ আগস্ট ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা বিনিয়োগসীমা লঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই ব্যাখ্যা চেয়ে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে তাদের। আর নামিয়ে আনলে এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়। এ জন্য তিন দিন সময় বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়ম মেনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন। তবে গত জুলাই মাসে অনিচ্ছাকৃতভাবে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম হয়। ইতিমধ্যে বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করবে না, এমন নিশ্চয়তা দেন ব্যাংকটির এমডি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এনআরবিসির এমডি নির্দেশনা লঙ্ঘনের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হননি। আইন লঙ্ঘন করায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে থাকা এনআরবিসির চলতি হিসাব থেকে আদায় করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জরিমানা আরোপের বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়া বলেন, ‘লেনদেন করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। অনিচ্ছাকৃতভাবে এটা হয়েছে। আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। এরপরও জরিমানা হয়েছে। আমরা আবারও এ নিয়ে আপিল করব।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২৫ শতাংশ পর্যন্ত লেনদেন করার সুযোগ থাকলেও ব্যাংক খাতের গড় বিনিয়োগ গত জুন শেষে ছিল ১৯ শতাংশ। আর ব্যাংকগুলোকে এই সীমার বাইরে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল গঠন করে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২৯ ব্যাংক মিলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তবে ১২টি ব্যাংক নির্ধারিত শেয়ারের বাইরে বিনিয়োগ করেছে। এ জন্য সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের সার্বিক বিনিয়োগ চিত্র খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় অনিয়ম পেলে এসব ব্যাংকও জরিমানার মুখে পড়বে।