২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অ্যাঙ্গোলার এক ব্যবসায়ী প্রায় ৯০ কোটি ডলার বিমা কোম্পানির হিসাব থেকে ব্যক্তিগত হিসাবে পাঠিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।অ্যাঙ্গোলার সেই ব্যবসায়ীর নাম কার্লোস ম্যানুয়েল দে সাও ভিসেন্তে।
সুইস ব্যাংকে রক্ষিত অ্যাঙ্গোলার এক ব্যবসায়ীর ৯০ কোটি ডলার ফ্রিজ করেছে সুইস কর্তৃপক্ষ। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
অ্যাঙ্গোলার সেই ব্যবসায়ীর নাম কার্লোস ম্যানুয়েল দে সাও ভিসেন্তে। অভিযোগ, দেশটির প্রায় রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। সেই প্রভাব খাটিয়ে তিনি অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন।
কার্লোস ম্যানুয়েল দে সাও ভিসেন্তে ও তাঁর পরিবার অর্থ পাচার করেছে, এই সন্দেহে সুইজারল্যান্ডের সরকারি আইনজীবীরা ২০১৮ সালে সাতটি হিসাব ফ্রিজ করেন। অঙ্কের দিক থেকে এটা সুইজারল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ফ্রিজের ঘটনা। তবে পরবর্তীকালে ছয়টি হিসাব অবমুক্ত করে দেওয়া হয়।
২০০১ সালে এক ডিক্রি অনুসারে কার্লোস ম্যানুয়েল দে সাও ভিসেন্তের কোম্পানি তেলের বিমা করার একচ্ছত্র অধিকার পায়। সরকারি কোম্পানির টাকা পাচার করেন তিনি।
সুইস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভিসেন্তে প্রায় ৯০ কোটি ডলার বিমা কোম্পানির হিসাব থেকে ব্যক্তিগত হিসাবে পাঠিয়েছেন। ২০১৮ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এসওয়াইজেড সুইস কর্তৃপক্ষকে ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের একটি সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে সতর্ক করে। আইনজীবীরা বলেন, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী বা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত হিসাবে এভাবে কোম্পানির টাকা থাকা অস্বাভাবিক।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসেন্তে বলেন, সেই ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলার স্থানান্তর করা হয়েছিল ঋণ পরিশোধের জন্য। কিন্তু পরবর্তীকালে তদন্তে দেখা গেল, ভিসেন্তে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, সেগুলো সেই টাকা স্থানান্তরের পর সম্পাদিত চুক্তির কাগজ।
সেগুরোস কোম্পানির যে টাকা ভিসেন্তের হিসাবে এসেছিল, সেটা ছিল মূলত অ্যাঙ্গোলার সরকারি তেল কোম্পানি সোনাগলের টাকা। সেগুরোসের ১০ শতাংশ অংশীদারি ছিল সোনাগলের।সুইস আইনজীবী
ভিসেন্তে একবার এসওয়াইজেডকে নিজের পুরো সম্পদ সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরের কথা বলেছিলেন। এ ঘটনায় কোম্পানিটি আরও একবার সুইস কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেয়। তবে সেই স্থানান্তর সম্পন্ন হয়েছিল কি না, আদালতের রায়ে তা জানা যায়নি। ভিসেন্তে অবশ্য বলেছেন, জেনেভা কর্তৃপক্ষ যেভাবে তাঁর টাকার ব্যবস্থাপনা করেছে, তাতে তিনি খুশি ছিলেন না। সে জন্য তিনি এই টাকা স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।
সুইস আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, সেগুরোস কোম্পানির যে টাকা ভিসেন্তের হিসাবে এসেছিল, সেটা ছিল মূলত অ্যাঙ্গোলার সরকারি তেল কোম্পানি সোনাগলের টাকা। সেগুরোসের ১০ শতাংশ অংশীদারি ছিল সোনাগলের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হয়। তাই এত দিনে এই তদন্ত ও আদেশের বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।
কার্লোস ম্যানুয়েল দে সাও ভিসেন্তের সুইস আইনজীবী ক্লারা পোগলিয়া বলেন, ‘আমার মক্কেল সব অভিযোগ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে খণ্ডন করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মক্কেল বলেছেন, তিনি সব সময় আইনমাফিক কাজ করেছেন।’ ফৌজদারি মামলার কাঠামোতে এটি প্রতীয়মান হবে। পোগলিয়া আরও মনে করেন, এই মামলার বিবরণী প্রকাশিত হলে আইনে নিরীহতার অনুমান বলে যে নীতি আছে, তার লঙ্ঘন হবে। একই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত অধিকারও লঙ্ঘিত হবে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এই সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় গোথাম সিটি নামের এক পত্রিকায়। ভিসেন্তে তখন সংবাদটির প্রকাশ বন্ধ করার চেষ্টা করেন।