জয়পুরহাটের শারমিন এবার পছন্দের ঈদের জামা কিনেছেন দেশের অন্যতম ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফট-এর অনলাইন থেকে। ঢাকায় না এসে পছন্দের ঈদের জামা কিনেছেন তিনি। সেই সঙ্গে জামার দাম বাবদ ১ হাজার ৯৯৫ টাকা বিকাশে পরিশোধ করে ক্যাশব্যাক পেয়েছেন ২০০ টাকা। তাতে শারমিনের কেনাকাটার আনন্দ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
উৎসবের এ সময়ে শারমিনের মতো অনলাইনে বা শপিং সেন্টার থেকে পছন্দের জামা, জুতা, অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য কিনে ডিজিটাল লেনদেনে ক্যাশব্যাক সুবিধা উপভোগ করছেন অসংখ্য ক্রেতা। কেবল জামা-জুতা-সাজগোজের পণ্যই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, আসবাব, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, খাদ্যপণ্যসহ বিশাল পণ্য সমারোহে মিলছে বিকাশের ক্যাশব্যাক সুবিধা। এ সুবিধা ক্রেতাকে সহজে ডিজিটাল লেনদেনের অভিজ্ঞতা দেওয়ার পাশাপাশি দিচ্ছে বাড়তি আনন্দ।
গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদের কেনাবেচা জমে না উঠলেও এবার সব শ্রেণির মানুষ সাধ্যমতো ছোট–বড় সব ধরনের বিক্রেতার কাছ থেকে কিনছেন পছন্দের পণ্য। জমে উঠেছে ঈদবাজার। ফেসবুকভিত্তিক পেজ ফুরোমনের উদ্যোক্তা সোহানা পারভীন বলেন, ‘শাড়ি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক কেনাবেচা করছি আমরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রাহকেরা আমাদের পণ্য কিনে বিকাশে অর্থ পরিশোধ করছেন। আমরা কুমিল্লা, যশোর, পাবনা, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিকাশেই অর্থ পরিশোধ করছি। আমরা যেখানেই থাকি, আর ক্রেতা যেখানেই থাকুক না কেন, বিকাশের কারণেই সময়মতো অর্থ পরিশোধের ফলে পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’
ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা, অনলাইন শপ, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১০ হাজার ব্র্যান্ড আউটলেট, এলাকার ছোট-বড় দোকান, সুপারশপ, রেস্টুরেন্ট, বেকারিসহ বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটায় বিকাশে লেনদেনে গ্রাহকেরা পাচ্ছেন ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক। বিভিন্ন লাইফস্টাইল সামগ্রী, পোশাক, জুতা ও আনুষঙ্গিক পণ্য, ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান, রেস্টুরেন্টসহ প্রায় ৩ হাজার আউটলেট এবং জনপ্রিয় প্রায় ৭০টি অনলাইন শপে বিকাশে অর্থ পরিশোধ করে কেনাকাটা করলেই গ্রাহকেরা পাচ্ছেন ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক। এই অফারের আওতায় অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে কেনাকাটায় একজন গ্রাহক দিনে ২০০ টাকা করে মোট ৪০০ টাকা ক্যাশব্যাক পাবেন। আর অফার চলাকালীন একজন গ্রাহক ৩০০ টাকা করে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা ক্যাশব্যাক উপভোগ করতে পারবেন।
বর্তমানে দেশের ৩৩টি ব্যাংকের নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এবং বাংলাদেশে ইস্যুকৃত ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকে গ্রাহক নিজেই অ্যাড মানি করে অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারেন। ফলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেন।
দেশের ৬ হাজারের বেশি ছোট–বড় দোকানে বিকাশে লেনদেনে মিলছে ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক। সুনির্দিষ্ট কিছু বেকারিতে কেনাকাটা করে বিকাশে লেনদেনে মিলছে ৫ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ক্যাশব্যাক। দেশের শীর্ষস্থানীয় সুপারস্টোরগুলোতে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করলে মিলছে বিকাশের কুপন। একজন গ্রাহক ন্যূনতম ১ হাজার টাকার কেনাকাটার লেনদেন বিকাশ করলে প্রতিবার ১০০ টাকার কুপন পাচ্ছেন। অফার চলাকালীন একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫ বার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার কুপন পেতে পারেন।
ঈদ, পয়লা বৈশাখ, পূজা বা অন্য উৎসবকে সামনে রেখে গ্রাহকদের ডিজিটাল পেমেন্টের হার বাড়লেও সারা বছরই এখন ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছেন গ্রাহকেরা। দেশের শীর্ষস্থানীয় সুপারস্টোর স্বপ্ন–এর ফিন্যান্স অ্যান্ড প্ল্যানিং উপব্যবস্থাপক শেখ শাহরিয়াজ কাদেরী বলেন, সুপারশপে যেহেতু সব ধরনের পণ্যের সমাহার এক ছাদের নিচে থাকে, তাতে ক্রেতারা ফর্দের বাইরেও কেনাকাটা করে থাকেন। ফলে ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধা থাকায় ক্রেতাকে বাড়তি এই কেনাকাটার জন্য নগদ টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
শেখ শাহরিয়াজ কাদেরী আরও বলেন, বিকাশ অ্যাপ গ্রাহকবান্ধব হওয়ায় সব ধরনের গ্রাহকই অ্যাপ থেকে অর্থ পরিশোধ করে পণ্য কেনেন। সব সময়ই বিকাশে লেনদেনে পণ্য কিনলেও অফারের সময়গুলোতে তিন গুণ পরিমাণ বেশি গ্রাহক বিকাশে অর্থ পরিশোধ করে পণ্য কেনেন। বছরজুড়ে নানান ধরনের অফার কুপনের মাধ্যমে বিকাশ তার গ্রাহকদের উজ্জীবিত রাখে। অনলাইনের ক্ষেত্রেও বিকাশে লেনদেনে অভ্যস্ততা দেখা যায়।
বড় সুপারশপের পাশাপাশি এখন অলিগলির ছোট মুদিদোকানেও বিকাশে লেনদেনের সুযোগ রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মার্চেন্ট রয়েছে বিকাশের। ফলে এসব দোকানে খুচরা টাকার ঝামেলা এড়িয়ে ছোট থেকে বড়, যেকোনো অঙ্কের কেনাকাটায় লেনদেন করা যাচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে। কেবল পণ্য কেনাকাটা নয়, রাইড শেয়ারিং সেবা, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমানের টিকিট কেনায়ও ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিকাশ।
অনলাইনে খাবার অর্ডার করে বা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট গিয়েও ডিজিটাল লেনদেনের অভ্যাস বাড়ছে। কিউআর কোড স্ক্যান করে বা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে খুব সহজেই লেনদেনের সুযোগ থাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের মধ্যে এই অভ্যাস তৈরি হচ্ছে।
বিকাশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মীর নওবত আলী বলেন, ডিজিটাল লেনদেনের প্রকৃত সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করছি। এখন একদম প্রান্তিক উদ্যোক্তারাও পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারছেন। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বিকাশ লেনদেন কার্যকর করতে ইকোসিস্টেম তৈরি অব্যাহত রয়েছে। আর ঈদ-পার্বণকে সামনে রেখে ক্যাশ ব্যাকসহ নানা অফারে গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন সাশ্রয়ী করতে আমাদের এই উদ্যোগ।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবরার মাহমুদ বলেন, ‘আমি মোটামুটি ক্যাশলেস জীবনব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি এবং আমি এটা এনজয় করছি। সুন্দরবনের মাওয়ালিদের কাছ থেকে মধু কিনে বা পদ্মার জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে বিকাশেই অর্থ পরিশোধ করি। রাইড শেয়ারের অর্থ, নিত্যপণ্য কিনে অর্থ পরিশোধ, বিল দেওয়া, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্যাকেজ কেনা, জরুরি ওষুধ কেনা, এমনকি সেলুনে অর্থ পরিশোধ করা—সবকিছুই বিকাশের মাধ্যমে করি আমি।’
আবরার মাহমুদের মতোই প্রায় ক্যাশলেস পেমেন্টে অভ্যস্ত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নন্দিনী। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং লেনদেন এখন আমার বিকাশ ওয়ালেট থেকেই করতে পারছি। কাউন্টার কিংবা এটিএম বুথে না গিয়েই ব্যাংক থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টে যখন প্রয়োজন, তখনই টাকা আনতে পারি। আর কেনাকাটাসহ দৈনন্দিন সব লেনদেন বিকাশেই করতে পারছি সহজেই।’
বর্তমানে দেশের ৩৩টি ব্যাংকের নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এবং বাংলাদেশে ইস্যুকৃত ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকে গ্রাহক নিজেই অ্যাড মানি করে অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারেন। ফলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেন। ঢাকার ওয়ারী এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দিন কয়েক আগে আমি পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখি টাকা কিছুটা কম পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে অ্যাড মানি করে মেয়ের পছন্দের জামাটা কিনে দিতে পেরেছি। মেয়ের খুশি দেখে আনন্দ যেমন হয়েছে, তেমনি ক্যাশব্যাকে কিছু সাশ্রয় হওয়ায় স্বস্তি এসেছে।’