করোনার শুরুর দিকে রেমিট্যান্স, মানে প্রবাসী আয়ে যে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছিল, সেই ধারায় ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। টানা তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় কমেছে। আগামী দিনগুলোতে তা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা।
জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ১৮১ কোটি ডলারের আয় পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা)। সদ্য সমাপ্ত আগস্টে গত বছরের একই মাসের তুলনায়ও প্রবাসী আয় কমেছে। গত বছরের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। সেই হিসাবে আগের বছরের চেয়ে গত আগস্টে প্রবাসী আয় প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে।
এ ছাড়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় সোয়া ৩ শতাংশ। জুলাইয়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৮৭ কোটি ডলার, প্রায় ১৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৯৪ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা, যা দেশের সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো।
সাধারণত কোরবানির ঈদের আগে আয় আসা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার কমেছে। গত জুলাই মাসে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে। এমনকি চলতি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ছাড়া অন্য সব মাসের চেয়ে জুলাইয়ে কম আয় এসেছে, যা পরিমাণে ১৮৭ কোটি ডলার। এই আয় আগের মাস জুনের তুলনায় ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার এবং আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। ফলে সামনে যে আয় আরও কমবে, এমন আশঙ্কা ব্যাংকারদের।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার মধ্যে সবার আয় কমলেও দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বেড়েছিল। এটা ছিল মূলত অবৈধ পথের আয়। বিমান যোগাযোগ ও অবৈধ পথ বন্ধ থাকার ফলে সব আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে। এখন যোগাযোগ শুরু হওয়ায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমে গেছে। সামনের দিনে আয় আরও কমে যেতে পারে।
বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয় সরকার। এ ছাড়া অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দেয়।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় আসে প্রায় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই আয় ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১ হাজার ৮০৩ কোটি ডলারের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। গত এক বছরে প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, তা দিয়ে দেশে সাতটি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরিতে মোট ব্যয় হবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।