পর্দা নামল মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। এ বছর বাণিজ্য মেলায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মেলায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির আদেশ মিলেছে, দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৯২ কোটি টাকার সমান।
গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের মেলার সমাপনী ঘোষণা করা হয়। রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) মেলা শেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
গত ২১ জানুয়ারি থেকে বিবিসিএফইসিতে বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলা আয়োজন করে। সাধারণত ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। তবে এ বছর জাতীয় নির্বাচনের কারণে মেলা শুরুর সময় কিছুটা পেছানো হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত বছরের চেয়ে এ বছর মেলায় রপ্তানি আদেশ ও পণ্য বিক্রি বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় রপ্তানি আদেশ বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং নগদ বেচাকেনা বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এবারে মেলায় মোট ৩০৪টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর—এই পাঁচ দেশের নয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। মেলায় মোট স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৫১।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানান, নতুন রপ্তানি পণ্য বাড়াতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তশিল্পকে ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর অংশ হিসেবে আগামী এক বছরে সারা দেশে হস্তশিল্পের এক লাখ কারিগর তৈরি করা হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে রপ্তানি আয় বাড়বে।
দেশের রপ্তানি বাড়াতে আগামী বছর থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে বহুমুখীকরণ করা হবে বলে জানান আহসানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়াতে আগামী মেলায় সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হবে। বিদেশি প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের কাছে দেশীয় পণ্য তুলে ধরা হবে। আশা করছি এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।’
ভবিষ্যতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিন থেকে পাঁচ দিনের একটি আন্তর্জাতিক মেলা আয়োজনের প্রস্তাব দেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এক মাসের মেলায় অংশ নিতে চায় না। এ জন্য তিন থেকে পাঁচ দিনের মেলা আয়োজন করা গেলে পণ্যের রপ্তানি আদেশ বাড়বে।
৪১ প্রতিষ্ঠান পেল পুরস্কার
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে মোট ৪১টি স্টল ও প্যাভিলিয়নকে সেরা অংশগ্রহণকারীর পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, কেওয়াই টু টেন, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, কারা অধিদপ্তর, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রোমোশন সেন্টার, পেন্টেল (সিঙ্গাপুর), জয়িতা ফাউন্ডেশন, ক্লে ইমেজ, এম আর টেকনোলজি, বাংলাদেশ চা বোর্ড, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও হাতিল কমপ্লেক্স।