গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের একটি হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। নির্বাচনের এক বছর আগে হিসাবটি খুলে জমা করা হয় নগদ টাকা। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে এসে শুরু হয় নগদ টাকা উত্তোলন। এভাবে এই হিসাব থেকে নির্বাচনের আগেই উত্তোলন করা হয় প্রায় ৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকের বনানী শাখায় হিসাবটি খোলা হলেও নগদ টাকার বেশির ভাগ উত্তোলন করা হয়েছে প্রধান কার্যালয়ের নিচে থাকা গুলশান শাখা থেকে। ইউনিয়ন ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনায় এ তথ্য মিলেছে।
মোস্তাক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এই হিসাব খোলা হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২০ আগস্ট হিসাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকটির অনলাইন তথ্যভান্ডার থেকে এই হিসাবে সব তথ্য গায়েব করে ফেলা হয়। যদিও হিসাব বন্ধ হলেও তথ্য মুছে ফেলার সুযোগ নেই। হিসাবের তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে, এমন হিসাবের সংখ্যা ইউনিয়ন ব্যাংকে আরও রয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
নিশ্চয়ই এই বেনামি হিসাবটি নির্বাচনের কাজের জন্য খোলা হয়েছিল, সেই কাজে ব্যবহারও হয়েছে। ব্যাংকের এমডির নির্দেশ ছাড়া এমন হিসাব খোলা ও বন্ধ হতে পারে না। তদন্ত করে দেখতে হবে কারা এই হিসাব থেকে টাকা নিয়েছে।মোস্তফা কে মুজেরী, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক
রহস্যময় এই হিসাবের নামে ইউনিয়ন ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণও দেওয়া হয়েছিল। এই ঋণ এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যে ঠিকানা ব্যবহার করে মোস্তাক ট্রেডার্সের হিসাব খোলা হয়, সেই ঠিকানায় এই প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাননি প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন এমন অনেককে ও তাঁদের পক্ষের ব্যক্তিদের তাঁরা নির্বাচনের আগে এই হিসাব থেকে টাকা তুলতে দেখেছেন। ক্রিকেট থেকে চলচ্চিত্র তারকা, নবীন থেকে প্রবীণ প্রার্থীরাও ছিলেন এই তালিকায়। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনের খরচ চালাতে এটা ছিল তৎকালীন সরকারের উপহার, যে খরচ দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। এ জন্য ইউনিয়ন ব্যাংকসহ তাঁর মালিকানায় থাকা আরও ব্যাংক থেকে এমন বেনামি ঋণ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক ‘ব্যাংক খেকো’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ইউনিয়ন ব্যাংকের বনানী শাখায় হিসাবটি খোলা হয় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর। একই দিন ১৭টি লেনদেনের মাধ্যমে নগদ ২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা জমা করা হয়। এই ১৭টি লেনদেনের মধ্যে চারবার ২ কোটি টাকা করে জমা করা হয়। দেড় কোটি টাকা করে জমা করা হয় পাঁচবার। বাকি অর্থ জমা হয় অন্য অঙ্কের। এরপরের দিন ১৬ নভেম্বর সাতবারে জমা দেওয়া হয় নগদ ১০ কোটি টাকা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এস আলম নিয়ন্ত্রিত আরও কয়েকটি ব্যাংকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এসব ব্যাংক এখন তারল্যসংকটে ভুগছে। গ্রাহকদের অনেকে তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
কথিত মোস্তাক ট্রেডার্সের হিসাবের ব্যাপারে ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে একাধিকবার গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি। মুঠোফোনেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই বেনামি হিসাবটি নির্বাচনের কাজের জন্য খোলা হয়েছিল, সেই কাজে ব্যবহারও হয়েছে। ব্যাংক এমডির নির্দেশ ছাড়া এমন হিসাব খোলা ও বন্ধ হতে পারে না। তদন্ত করে দেখতে হবে কারা এই হিসাব থেকে টাকা নিয়েছে। আইনি পথে সেই টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এখনই সময় যারা এসব অপকর্মে জড়িত ছিল, তাদের আটকে ফেলা। তারা পালিয়ে গেলে তথ্য পাওয়া যাবে না, টাকা আদায়ে আইনি পথেও এগোনো যাবে না।’
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর একসঙ্গে দুটি চেক বই নেওয়ার জন্য চাহিদাপত্র দেয় গ্রাহক। পাশাপাশি ছয়বারে আবার ১০ কোটি টাকা জমা করা হয়। এরপর ২০ নভেম্বর ২০ কোটি টাকা ও ২১ নভেম্বর আরও ২০ কোটি টাকা জমা করা হয়। ৮ ডিসেম্বর ছয়বারে জমা হয় দেড় কোটি টাকা। এরপর ওই হিসাবে এক বছর কোনো লেনদেন হয়নি।
ইউনিয়ন ব্যাংকের বনানী শাখায় হিসাবটি খোলা হয় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর। একই দিন ১৭টি লেনদেনের মাধ্যমে নগদ ২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা জমা করা হয়। এই ১৭টি লেনদেনের মধ্যে চারবার ২ কোটি টাকা করে জমা করা হয়। দেড় কোটি টাকা করে জমা করা হয় পাঁচবার। বাকি অর্থ জমা হয় অন্য অঙ্কের। এরপরের দিন ১৬ নভেম্বর সাতবারে জমা দেওয়া হয় নগদ ১০ কোটি টাকা।
এই হিসাব খোলার সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হিসাবধারীর পরিচয় যাচাই না করে সেই সময় এস আলমের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিন ও ব্যাংকের এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নির্দেশে হিসাবটি খোলা হয়েছিল। এই হিসাবই পরে নির্বাচনের সময় অর্থ লেনদেনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর একসঙ্গে দুটি চেক বই নেওয়ার জন্য চাহিদাপত্র দেয় গ্রাহক। পাশাপাশি ছয়বারে আবার ১০ কোটি টাকা জমা করা হয়। এরপর ২০ নভেম্বর ২০ কোটি টাকা ও ২১ নভেম্বর আরও ২০ কোটি টাকা জমা করা হয়। ৮ ডিসেম্বর ছয়বারে জমা হয় দেড় কোটি টাকা। এরপর ওই হিসাবে এক বছর কোনো লেনদেন হয়নি।
এই হিসাব থেকে নগদ টাকা উত্তোলন শুরু হয় ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর, চলে গত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ওই দিন বনানী শাখা থেকে এক চেকে উত্তোলন করা হয় ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও ১৪ ডিসেম্বর গুলশান শাখা থেকে তোলা হয় ১ কোটি টাকা। এরপর সব টাকা তোলা হয় গুলশান শাখা থেকে। এর মধ্যে ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তোলা হয় ৪১ কোটি টাকা। পৃথক পৃথক চেকে ১০ কোটি, ৬ কোটি ও পাঁচটি চেকে ৫ কোটি টাকা করে মোট ২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তোলা হয় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ৭ জানুয়ারি ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরপর ৯ জানুয়ারি পাঁচটি চেকের মাধ্যমে হিসাব থেকে পুরো ২৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়।
এরপর আর ওই হিসাবে লেনদেন বন্ধ ছিল। গত ১৫ আগস্ট পে–অর্ডারের মাধ্যমে হিসাবে থাকা ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। এরপর ২০ আগস্ট হিসাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তথ্যভান্ডার থেকে হিসাবটির তথ্য মুছে ফেলা হয়। ব্যাংকটির এমডির নির্দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই তথ্য মুছে ফেলে বলে জানা যায়। জানা গেছে, নগদ টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিয়ম থাকলেও গুলশান শাখায় টাকা উত্তোলনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হয়নি।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট পরিদর্শনে গিয়ে ঘোষণার চেয়ে কম টাকা থাকার বিষয়টি দেখতে পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কাগজপত্রে ওই শাখার ভল্টে যে পরিমাণ টাকা থাকার তথ্য ছিল, বাস্তবে তার চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা কম পান কর্মকর্তারা। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউর নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি নগদ জমা ও উত্তোলন হলে ব্যাংকগুলোকে নগদ লেনদেন প্রতিবেদন (সিটিআর) ও যেকোনো হিসাবে হঠাৎ অস্বাভাবিক লেনদেন হলে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তবে ইউনিয়ন ব্যাংক মোস্তাক ট্রেডার্সের হিসাবের ক্ষেত্রে ওই নিয়ম পরিপালন করেনি বলে জানা গেছে।
ব্যাংকটির বনানী শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মোদাচ্ছের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শাখায় নতুন এসেছেন। তাঁর শাখায় মোস্তাক ট্রেডার্স নামে কোনো হিসাব নেই।
এদিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে মোস্তাক ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সালের ডিসেম্বর ও গত বছরের মার্চে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ তুলে নেওয়া হয়; যার পুরোটাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
ব্যাংকের নথিতে মোস্তাক ট্রেডার্সের ঠিকানা পুরান ঢাকার বংশালের আগা সাদেক সড়কের ৯৬ নম্বর বাড়ি। গত বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনের নিচতলায় মা ট্রেডার্স, মদিনা ট্রেডার্স, আলিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ কয়েকটি দোকান রয়েছে। তবে মোস্তাক ট্রেডার্সে নামে কোনো প্রতিষ্ঠান গত ২৫ বছরে সেখানে ছিল না বলে জানান এসব দোকানের মালিকেরা।
গত ২৮ আগস্ট ‘এস আলমের পিএসের প্রতিষ্ঠানের হিসাবেই শতকোটি টাকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোতে। এতে বলা হয়, পিএস আকিজ উদ্দিন সংশ্লিষ্ট মোস্তাক ট্রেডার্সে ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এরপর মোস্তাক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ মুশতাক মিঞা পরিচয়ে ডাকযোগে প্রথম আলোর কাছে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে জানান, এস আলম গ্রুপ বা আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে মোস্তাক ট্রেডার্সের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই প্রতিবাদপত্রে কোনো ফোন নম্বর দেওয়া হয়নি, তবে প্রতিবাদপত্রে বংশালের ১৬ নম্বর আগা সাদেক রোডের ঠিকানা দেওয়া হয়। তবে চিঠির ওপর নাম লেখা মোস্তাক মিয়া, ঠিকানা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের চৌহুমনির চারিড়া পাড়া।
ওই প্রতিবাদপত্রের সূত্র ধরে বংশালের আগা সাদেক রোডের ১৬ নম্বরে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, একজন মানুষ চলতে পারে এমন চওড়া গলি পেরিয়ে সেটি জীর্ণ একটি বাড়ির ঠিকানা। তবে সেখানেও মোস্তাক ট্রেডার্স নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ১৮/৩ আগা সাদেক রোডে এম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক নূর মোহাম্মদ ও তাঁর ভাই ইব্রাহিম মুস্তাক। তাঁরা প্রায় ৩০ বছর ধরে সেখানে তুলার ব্যবসা করেন। তাঁরা জানান, কোনো ব্যাংকে তাঁদের কোনো ঋণ নেই। তবে ইব্রাহিম মুস্তাক ২০ বছর আগে ইসলামী ব্যাংকে একটি হিসাব খুলেছিলেন।
ইসলামী ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছর এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থেকে তাঁদের ব্যাংকটি পুরো অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। ওই সময়ে কোনো আমানতকারীর তথ্য ব্যবহার করে গ্রুপটি অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে তা অবাক হওয়ার মতো কিছু না। যদিও এটি বড় ধরনের আর্থিক অপরাধ।
আমার দায়িত্ব নেওয়ার বেশি দিন হয়নি। পত্রিকায় যা ছাপা হয়েছে ও হচ্ছে, তাই এখানে এসে দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে, তারা বের করবে প্রকৃত অবস্থা কী। তবে কত টাকা কে নিয়েছে, তা জানতে হলে ফরেনসিক নিরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই।ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ফরীদ উদ্দীন আহমদ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ২০১২ সালে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। সব কটিই রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক একটি। ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের পেছনে শুরু থেকে এস আলম গ্রুপ থাকলেও সামনে রাখা হয় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে। তখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এক জোট হয়ে সরকারে ছিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন এস আলমের ভাই শহীদুল আলম। ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর। বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম, ওসমান গনি, সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও জামাতা বেলাল আহমেদ। ব্যাংক দখল, অর্থ লুটপাট ও অর্থ পাচারে সাইফুল আলমের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল হক চৌধুরী।
গত ২৭ আগস্ট আগে পর্ষদ বিলুপ্ত করে নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান করা হয় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক এমডি মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদকে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক এক চিঠিতে ব্যাংকটিকে জানায়, নামে-বেনামে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ একাই নিয়েছে এস আলম গ্রুপ, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ। এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে কাল্পনিক লেনদেনের মাধ্যমে, যার জামানতও নেই। আবার ব্যাংকটির মোট ঋণের ৪২ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়ছে বলে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ফরীদ উদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার বেশি দিন হয়নি। পত্রিকায় যা ছাপা হয়েছে ও হচ্ছে, তাই এখানে এসে দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে, তারা বের করবে প্রকৃত অবস্থা কী। তবে কত টাকা কে নিয়েছে, তা জানতে হলে ফরেনসিক নিরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই।’
ব্যাংক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করেছে। তবে তাতেও এই ব্যাংকে এস আলমের প্রভাব কমেনি। ফলে ব্যাংকটির প্রকৃত ক্ষত বের করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ব্যাংকটির পুনর্গঠন করা পর্ষদ দিয়ে কাজ না হলে তা পরিবর্তন করে দিতে হবে। না হলে এই বোঝা আরও বাড়বে। কোনো বিলম্ব না করে এখনই সক্রিয় হতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।