চলতি মাসের শুরুর দিকে বাজারে চালের দাম কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা বেড়ে যায়। এরপর ১৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেই সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে বাজারে অভিযানও চালাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবু রাজধানীর চালের বাজারে এর বড় কোনো প্রভাব পড়েনি।
ঢাকার বাইরে দেশের চাল উৎপাদনের জেলা হিসেবে খ্যাত দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় চালের দাম পাইকারি বাজারে কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কোথাও দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা, কোথাও ২ থেকে ৩ টাকা। এ দাম কমার পরও তা আগের অবস্থায় ফেরেনি। গতকাল কুষ্টিয়ায় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকায়।
এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল ৬৬ টাকায়। আর মোটা চাল ২ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার মোকামে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সরু চালের দাম কার্যকর হয়েছে। গত রোববার মোকামে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ৬২ টাকা নির্ধারণ করা দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকার বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৪-৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর ২৮) কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে জানা যায়, বছরের শুরুতে ঢাকার বাজারে চালের দাম যতটা বেড়েছে, এখনো তা ততটা কমেনি। ঢাকার বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৪-৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর ২৮) কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা কিছু সরু চালের দাম আরও বেশি। তবে বাজার ও বিক্রেতাভেদে দরদাম করে নিলে মোটা ও সরু চালের দাম কেজিতে কোথাও কোথাও এক টাকা কম রাখা হচ্ছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী দিনাজপুর রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি চালের বাজার এখনো চড়া। বছরের শুরুতে দাম বেড়ে যেখানে উঠেছিল, সেখানেই আছে। তাই খুচরা বাজারে দাম কমেনি। পাইকারিতে দাম কমলে খুচরায় কমবে।
পাইকারিতে মোটা চালের প্রতি বস্তার (৫০ কেজি) দাম ২ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। তাতে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৫১ থেকে ৫২ টাকা। আর মাঝারি মানের চালের প্রতি বস্তার দাম ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। তাতে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর সরু চালের প্রতি বস্তার দাম পাইকারিতে ৩ হাজার ৩০০ টাকার বেশি।
তবে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে এরই মধ্যে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।
রাজধানীর পলাশী বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব জিনিসের দাম এখন বেশি। এর মধ্যে চালের দাম অনেক দিন একটা জায়গায় স্থির ছিল। এখন সেটাও বেড়ে গেল। এতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্টও বাড়ল।’
বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য চালকলমালিকেরা ধান ব্যবসায়ীদের দুষছেন। আর চাল ব্যবসায়ীরা এই দায় চাপাচ্ছেন মিলমালিকদের ওপর। করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও চালের মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছে। অভিযান শুরু করা হয়েছে বাজারে। ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি সরু চালের দাম বেঁধে দেওয়া হয় খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬৪ টাকা।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখন খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি। পরে সরকার ডিম আমদানির উদ্যোগ নিলে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আলু ও পেঁয়াজ এখনো সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া জেলার চালকলমালিকেরা ভূমিকা রাখেন। তাঁদের কাছ থেকে ধান-চাল মজুতের পাক্ষিক প্রতিবেদনও পাওয়া যায় না।কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন
তবে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে এরই মধ্যে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কি মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকের কাছে ধান নেই। মৌসুমের শুরুতে নিবন্ধনহীন একশ্রেণির ব্যবসায়ী ধান কিনে মজুত করেছেন। তাঁরা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। অভিযানের কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ বেড়েছে। তাতে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। দাম আরও কমে আসবে। সে জন্য অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
এদিকে গত রোববার কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালকলমালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলায় চালের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়। ওই সভায় চালকলমালিক ও ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ অভিযোগ করেন, কুষ্টিয়ার চালকলমালিকেরা খেয়ালখুশিমতো চালের দাম বাড়ান না। উত্তরবঙ্গের কিছু করপোরেট চাল ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়ান। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, কোনো চালকলমালিক কেজিতে এক টাকাও লাভ করেন না।
তবে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন সভায় বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া জেলার চালকলমালিকেরা ভূমিকা রাখেন। তাঁদের কাছ থেকে ধান-চাল মজুতের পাক্ষিক প্রতিবেদনও পাওয়া যায় না।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আনোয়ার পারভেজ, বগুড়া; তৌহিদী হাসান, কুষ্টিয়া; ওমর ফারুক, নওগাঁ ও রাজিউল ইসলাম, দিনাজপুর]