আদানির বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। ভারতীয় এই কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুতের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার পর বকেয়া পরিশোধের বন্দোবস্ত করার জন্য চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এ সময়সীমার মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে। তবে বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না, টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ২০০ কোটি রুপি। এই পাওনা কবে পরিশোধ করা হবে, সে ব্যাপারে একটি পরিষ্কার ধারণা চায় আদানি গোষ্ঠী।
এর আগে বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল আদানি পাওয়ার। পাশাপাশি পাওনা পরিশোধের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ১৭ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপির ঋণপত্র দেওয়ার জন্য কোম্পানিটি বলেছিল।
একটি সূত্রের উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বকেয়া অর্থের বিপরীতে একটি ঋণপত্র দিতে চেয়েছিল। তবে এ পদক্ষেপ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অন্যতম কারণ হিসেবে ডলারের সংকটের কথা বলা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এর পরপরই আদানি পাওয়ার তাদের ঝাড়খন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়, ফলে দেশটিতে বিদ্যুতের ঘাটতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের ওয়েবসাইটের তথ্য উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার আদানির গড্ডা কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, যদিও এটির সক্ষমতা ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে থেকে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খন্ড কেন্দ্রই সবচেয়ে বড়। এর পরের অবস্থান পায়রা (১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১ হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট) এবং এসএস পাওয়ার ১ (১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট)। রামপালের বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি ও এসএস পাওয়ার ১—কেন্দ্র দুটি কয়লার ঘাটতির কারণে অর্ধেকেরও কম সক্ষমতায় চলছে বলে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের তথ্যে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুতের দাম পরিশোধ শ্লথ হয়ে গেছে, ফলে অনেক বকেয়া জমেছে। অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে আগের মাসগুলোর বকেয়া হিসেবে ৯ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। তবে প্রতি মাসে ৯ থেকে ১০ কোটি ডলারের বিলের বিপরীতে ২ থেকে ৫ কোটি পরিশোধ করা হচ্ছে।
ঝাড়খন্ডের কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়, তার প্রতি ইউনিটের দাম ১০–১২ টাকা (৭–৮ দশমিক ৫০ রুপি)। দাম মূলত নির্ভর করে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় কয়লার দামের ওপর।
সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর আদানির পক্ষ থেকে কেউ কথা বলতে চাননি। তবে কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা এর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, তাঁরা বিষয়টির সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী। অর্থ পরিশোধে দেরি এবং বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছতার অভাব তাঁদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কারণ, তাঁদের ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাকে প্রভাবিত করবে। কারণ, বাংলাদেশ এই কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা। প্রতি মাসে ৯–১০ কোটি ডলারের বিলের মানে হলো এই কেন্দ্র থেকে আদানির ১১০ কোটি ডলার বা ৯ হাজার কোটি রুপির বেশি অর্থ আয় হয়।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারে পতনের পর আদানি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে। দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে এবং দাম পরিশোধেও কোনো সমস্যা নেই। কোম্পানিকে বলা হয়েছে, স্থানীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থায় একটি সংযোগের জন্য আবেদন করতে। অনুমোদন পেলে বিহারের লাখিসরাইয়ে অবস্থিত একটি সাবস্টেশন থেকে সংযোগ দেওয়া হবে।