আহসান এইচ মনসুর
আহসান এইচ মনসুর

অভিমত

সরকারি ব্যয় সংকোচনে গভীর নজর দরকার 

বাজেটের ক্ষেত্রে সরকারের স্বেচ্ছাধীন সক্ষমতা সংকুচিত হয়েছে। কারণ সুদ, ভর্তুকি ও রাজস্ব ব্যয়ের খাতে বাজেটের বেশির ভাগ অর্থ খরচ হচ্ছে। আর্থিক সক্ষমতার দিক থেকে সরকারের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের পক্ষে বড় কোনো ব্যয়ের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বলা যায়, সরকারের উন্নয়ন সক্ষমতা সংকুচিত হয়ে গেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে এবারে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বাজেট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সরাসরি প্রভাবিত করে না, করে মুদ্রানীতি। দেড় থেকে দুই বছর দেরিতে মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটি কঠোর হয়েছে। বিনিময় হার মোটামুটি স্থিতিশীল হয়েছে, এটা স্বস্তিজনক। 

মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে আগামী অর্থবছরের বাজেট চলতি বছরের প্রকৃত বাজেট থেকে ছোট হয়েছে। তবে এটা মুদ্রানীতিকে সমর্থন করে। এখন সরকার যদি ব্যয় কমায়, তাহলে জানুয়ারি মাসের পর মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করি। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, আগামী বছরের জুনের শেষে মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমানো সম্ভব। তবে এটা পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে, গড় মূল্যস্ফীতির হার অর্থবছর শেষে বেশিই থাকবে।

বাজেট বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থায়ন। কারণ, রাজস্ব ঘাটতি হবেই। এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। বর্তমান কর কাঠামোতে এটা সম্ভব হবে না। চলতি বছরেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আদায় হবে না। আমাদের হিসাবে, আগামী বছর কর আদায়ে ৩০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি দরকার হবে। অন্যদিকে, সরকার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নেবে। ব্যাংক খাত দুর্বল। আমানত প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সরকার বেশি ঋণ নিলে ব্যক্তিগত খাত ঋণ পাবে না। অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত খাতের অংশীদারত্ব ৮৬ শতাংশ, তারা মাত্র ২৪ শতাংশ ঋণ পাবে। প্রশ্ন হলো, এটা দিয়ে কীভাবে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

সুতরাং আরও গভীরভাবে ব্যয় সংকোচনে নজর দেওয়া দরকার। কোথায় কোথায় কাটছাঁট করা যায়, এখনই ভাবতে হবে। প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি বাদ দেওয়া যায়। দরকার নেই নতুন গাড়িরও। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করা উচিত। 

সামাজিক সুরক্ষার অধীন পরিবারের কাছে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিক্রির আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। তবে সত্যিকারের দরিদ্ররা এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তা জানতে আগে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে একটি মূল্যায়ন দরকার। না হলে এর অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।


আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই