নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএপিএলসির সভাপতি রূপালী চৌধুরী।
ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রয়োজনে এখন সবচেয়ে জরুরি দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুবই নাজুক অবস্থা। মানুষ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেখানে ব্যাহত, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বেশি কিছু আশা করা বাহুল্য। এ কারণে সবার আগে আমাদের দরকার দেশে ভয়ভীতিমুক্ত স্বাভাবিক একটি পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
মানুষকে কেন্দ্র করেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। আমি মনে করি, মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারলে ব্যবসা-বাণিজ্যও গতি ফিরে পাবে।
অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব এই শঙ্কা দূর করা জরুরি। বিদ্যমান অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। এ খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাতে কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, আমাদের দেশের কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ এ খাতের সঙ্গে যুক্ত।
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁরা অতি দ্রুত সক্রিয় করে তুলবেন। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের নেতৃত্বশূন্যতা বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানকে আগে সক্রিয় করতে হবে। ব্যাংকের লেনদেন এখনো চলছে সীমিত পর্যায়ে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকিং লেনদেনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় হলে নতুন নেতৃত্ব পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারবে। এ জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির যে আকার, তাতে এক দিন ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাতে দিনে প্রায় ১২৫ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ও তৎপরবর্তী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে গেলে বন্ধ রয়েছে। সেই হিসাবে গত প্রায় ২০ দিনে আড়াই হাজার কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে এ ক্ষতি হয়তো কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও মানুষের মধ্যে পূর্ণ আস্থা। আমরা অপেক্ষা করছি সেই পরিবেশটি ফিরে আসার। নতুন সরকারের কাছে এটিই আমাদের এখনকার প্রথম চাওয়া। পরিবেশ ফিরে এলে তারপর নতুন করে ব্যবসার পরিকল্পনা করা হবে।
রূপালী চৌধুরী
সভাপতি, বিএপিএলসি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ