দেশে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেশি। অথচ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রধান অস্ত্র এখনো সুদের হার বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার কয়েক দফায় বাড়িয়েছে। এ বৃদ্ধির একটা সীমা থাকা উচিত। কারণ, সুদহার বাড়তে থাকলে ব্যবসায়ীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি কিছু নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে তা কোনো কাজে আসেনি। যেমন আমদানির সুযোগ পেয়েও অনেকে কিছু পণ্য আমদানি করতে পারেননি সমন্বয়হীনতার কারণে।
উদাহরণ দিয়ে যদি বলি, ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কিন্তু পরীক্ষা করার কথা বলে আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতি জায়গাতেই এ ধরনের সমস্যা আছে।
আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে ১. অর্থ, বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, কৃষি, খাদ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বৈঠক ও দৈনিক নজরদারি করা। ২. বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ৩. চাহিদা ও জোগানের তথ্যের ভিত্তিতে নিত্যপণ্যের ঘাটতি নির্ণয় করা, আমদানিপ্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রয়োজনে বাজার তদারক কমিটিতে এনজিওকর্মীদের যুক্ত করা। ৪. কৃত্রিমভাবে সরবরাহ সংকট তৈরি করে যে শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া। ৫. সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখার স্বার্থে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, পণ্য সংরক্ষণের অসুবিধাগুলো দূর করা এবং সুদের হার বৃদ্ধির মতো একচোখা নীতির পরিবর্তে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া।
সেলিম রায়হান
নির্বাহী পরিচালক
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)