এম এ জব্বার
এম এ জব্বার

সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার।  

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। কারণ, আমরা ভীত অবস্থায় আছি। নতুন করে চাঁদাবাজি ফিরে আসবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যে পর্যায়ে আছে, সেখান থেকে নিচের দিকে যাওয়ার শঙ্কা সেভাবে নেই। দেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সবাইকে বার্তা দিতে হবে।

গত দেড় দশকে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানে যোগ্য লোক বসানো হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে আমাদের ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। আমরা একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছি। আমাদের বলা হয়েছিল, ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু আমাদেরই সব করতে হয়েছে। সব জায়গায় অর্থ দিতে হয়েছে। এদিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৎ ব্যবসায়ীরা চাইলেও প্রকৃত ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে পারেন না। এ জন্য এনবিআরে বড় সংস্কার দরকার।

সব মিলিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকঠাক করে সেগুলোর কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যবসার খরচ কমানোর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাণিজ্য সংগঠনগুলোকেও রাজনীতির বাইরে নিয়ে আসতে হবে। যখন যেই দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের লোক বিজিএমইএর সভাপতি হন।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হতে হলেও রাষ্ট্রীয় প্রধানের আশীর্বাদ লাগে। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।

কোটা আন্দোলন ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ সরিয়ে নিতে পারে—এমন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তবে ক্রেতাদের নিয়ে আপাতত টেনশন (দুশ্চিন্তা) নেই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

পণ্য রপ্তানিতে আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ দরকার। এ জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ সেল গঠন করা উচিত সরকারের। পাশাপাশি পোশাক ও বস্ত্র, চামড়া ও চামড়াপণ্য, আসবাব, সেমিকন্ডাক্টর, তথ্যপ্রযুক্তিসহ (আইটি) সম্ভাবনাময় খাতগুলোজন্য পৃথক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

ইনস্টিটিউটগুলো গবেষণা, পণ্য উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করবে। আর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রফেশনাল লোক নিয়োগ করতে হবে।
আগামী ২০৫০ সালে বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর খাতের ব্যবসার আকার বেড়ে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে। ২০৩০ সালে এই খাতে ১০ লাখ লোকের ঘাটতি দেখা দেবে। আমাদের দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার প্রকৌশলী বের হচ্ছেন। তাঁদের আমরা কাজে লাগাতে পারি। তা ছাড়া প্ল্যাটফর্ম হলে বিদেশে থাকা অনেক দক্ষ লোকও দেশে ফিরে আসবেন।

ব্যাংক লুটপাটকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংস্কার করতে হবে। মনমানসিকতার পরিবর্তন লাগবে। দেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সেরে নিজেদের যোগ্য করতে তুলতে হবে। না হলে আমরা বাস মিস করব। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলো বসে নেই।

  • এম এ জব্বার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিবিএল গ্রুপ