ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের উদ্যোগটি প্রাথমিকভাবে খুব বেশি কার্যকর হবে বলে আমার মনে হয় না। এ উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত, এ বাজারে তথা আয়োজনের যাঁরা সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী, তাঁরা আদৌ এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চান কি না। দ্বিতীয়ত, এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ আছে কি না। যদি অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহ এবং লাভ থাকে, তবে উদ্যোগটি সফল হতে পারে।
এখন পর্যন্ত এ উদ্যোগের যে আয়োজন, তাতে রুপিতে বাণিজ্য তাঁদের জন্যই লাভজনক হতে পারে, যাঁদের ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি—উভয় ধরনের বাণিজ্য রয়েছে। অর্থাৎ, যাঁদের রুপিতে আয় করে রুপিতেই খরচ করার বন্দোবস্ত আছে, তাঁরাই এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীর সংখ্যা আমাদের দেশে খুব বেশি নেই। তাই শুরুতে এটি খুব বেশি কার্যকর হবে—এমনটা আশা করতে পারছি না।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য পরিস্থিতি, তাতে রুপিতে লেনদেন চালু হলে তাতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের লাভই বেশি। ভারত এ অঞ্চলে রুপিকে জনপ্রিয় করতে চায়। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করতে পারলে তাদের সেই চেষ্টায় কিছুটা হলেও অগ্রগতি হবে।
অন্যদিকে এ ধরনের উদ্যোগে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি যেমন নেই, তেমনি খুব বেশি লাভও নেই। তবে এ কথা ঠিক, এ উদ্যোগের ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি হবে। কোনো ব্যবসায়ী যদি মনে করেন সুযোগটি নেবেন, তাহলে তা নিতে পারবেন। কিছু না থাকার চেয়ে কিছু বিকল্প থাকা ব্যবসার জন্য ভালো।
ভারতের সঙ্গে আমাদের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তাই রুপিতে লেনদেন করতে গেলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এত রুপি কোথায় পাবেন—সেটা বড় প্রশ্ন হয়েই থাকছে। কেউ কেউ বলছেন, ভারতের ব্যাংক থেকে ক্রেডিট বা ধার নিয়ে এসব লেনদেন করা হবে। সে ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ধার করে যদি রুপিতে লেনদেন করতে হয়, তাহলে সেই ধার শোধ করব কীভাবে। ওই ধারের জন্য সুদ গুনতে হবে। ধার করেই যদি রুপিতে লেনদেন করতে হয়, তাহলে রুপির বদলে ডলার ধার করলেই তো সেটি বেশি লাভজনক।
অনেকে বলছেন, এ উদ্যোগের ফলে ডলার সাশ্রয় হবে। কিন্তু বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার নয়। আমি দেখছি, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের ডলার আয় কমে যাবে। ফলে ডলারের সরবরাহ যদি কম হয়, তাহলে কীভাবে ডলার সাশ্রয় হবে, সেটা বোধগম্য নয়। যেখানে লেনদেনই হবে রুপিতে, সেখানে ডলার সাশ্রয় হবে কীভাবে?
আবার কেউ কেউ বলছেন, ডলারের ওপর চাপ কমবে। সেটি তখনই হবে, যাঁদের আমদানি ও রপ্তানি—উভয় বাণিজ্য পুরোপুরি রুপিতে হয়। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য। তাই রুপিতে লেনদেন চালুর মাধ্যমে ডলারের চাপ কমানো যাবে, এটি আমি মনে করি না।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)