প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এ খাতের নীতিনির্ধারক, ব্যাংকের পরিচালক, ব্যাংকার, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার।
সিটি ব্যাংকও একসময় সমস্যায় পড়েছিল। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঐক্যবদ্ধ থাকায় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করায় সেখান থেকে আমরা আজকের এ অবস্থানে উঠে এসেছি। তা না হলে এটি সম্ভব হতো না। নিয়ত ভালো হলে ব্যাংক ভালো করবে। আর পরিবার, বন্ধু ও পরিচালনা পর্ষদের যদি নিয়ত থাকে সুবিধা নেবে, তাহলেই সমস্যা। আমরা ব্যাংকের পর্ষদ সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সব ঋণ কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদন দেওয়া হবে। আর সারা দেশের শাখাগুলো গ্রাহকদের সেবা দেবে।
সাধারণত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের ঋণ প্রদানের একটা সীমা দেওয়া থাকে। ব্যবস্থাপক এমনভাবে ঋণ দিয়ে দেয় যে পর্ষদ জানে না। এমডিও দায়িত্ব নেন না। পরবর্তীকালে খেলাপি হলে এমডি বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপককে অন্য শাখায় বদলি করেছি। এটিই সর্বোচ্চ শাস্তি। সে কারণে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে ঋণ অনুমোদনের ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।’
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাকেও ঠিক হতে হবে। একবার আমি আমাদের ব্যাংকে কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনতে চাইলে এমডি রাজি হচ্ছিলেন না। বললেন, বেতন বাবদ অনেক অর্থ চলে যাবে। নিজের বেতন বাড়াতে বললেও সেই এমডি বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনতে রাজি হননি। এর মূল কারণ হচ্ছে, এমডির আয়ের অন্য উৎসও ছিল। সেটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় তিনি এমন করেছিলেন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে আমরা রাজনৈতিক হেনস্তার শিকার। ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও পর্ষদ সদস্য হিসেবেও হেনস্তার শিকার হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে কেউ কেউ এমন সুবিধা পেতেন যে আমরা প্রতিযোগিতাসক্ষম থাকতাম না। রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাওয়া একটি পরিবার ৮-৯টা ব্যাংকের মালিকানা পেয়েছে। সেটি কীভাবে সম্ভব? অথচ আমাদের বলা হচ্ছে, ব্যাংকে একটি পরিবারের শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আমরা সেটি মেনে চলছি। তবে ব্যাংকে রাজনীতির এই জিনিসগুলো থাকলে আমরা পিছিয়ে যাব, সামনে এগোতে পারব না।
দেশে অলস পড়ে থাকা অর্থ ব্যাংক খাতে এলে তারল্য বাড়বে। এই অর্থ আনার উপায় হচ্ছে সহজ ব্যাংকিং। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে অলস পড়ে থাকা অর্থ বেচা-কেনায় প্রবেশ করানো গেলে আরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আমরা দেখছি, সারা দুনিয়া প্লাস্টিক কার্ডের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশে এখনো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি। আমরা প্লাস্টিক মানিকে আরও গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ এনবিআর ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করল। এটি করার পর ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকসংখ্যার প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া গেলে টাকা ছাপানোর খরচ বেঁচে যাবে। ডাকাতি কমবে। অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়বে। আমরা গ্রাহকদের গাড়ি কেনায় ৫০ লাখ ও ফ্ল্যাট কেনায় ২ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারি। তাহলে কেন কার্ডে ১০ লাখ টাকার সীমা বেঁধে দিতে হবে? কেন ৫০ লাখ টাকার সীমা দেওয়া হবে না? ঋণের টাকা আদায়ের দায়িত্ব তো আমাদের। যে ঋণ শোধ করতে পারবে না, তাঁকে আমরা কার্ড দেব না। এসব ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। এ জায়গায় নজর দেওয়া হলে আর্থিক খাত আরও গতিশীল হবে।
আজিজ আল কায়সার, চেয়ারম্যান, সিটি ব্যাংক