শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে দেশজুড়ে সহিংসতা তৈরি হয়। তাতে ব্যবসা–বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে গত রোববার থেকে অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় ব্যবসা–বাণিজ্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে দ্রুত দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
দেশে বড় ধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা চলমান আছে। কয়েক দিন ধরেই এমন নৈরাজ্য চলছে। এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি, পদে পদে অনিশ্চয়তা আছে। কত দিন এমন অনিশ্চিত পরিবেশ থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না। এটিও একটি চিন্তার কারণ।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই সরকারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন কেমন ধরনের ব্যক্তি, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। এটি নির্ভর করবে নতুন সরকারের ওপর।
বর্তমানে অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্ষয়িষ্ণু বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ), প্রবাসী আয় ও রাজস্ব আয়ে শ্লথগতি চলছে। সমস্যাগুলো অবশ্য পুরোনো। দীর্ঘদিন ধরেই এসব সমস্যা চলছে, আর গত কয়েক দিনে যে সহিংসতা হয়েছে, তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। তাঁদের আয় নেই বললেই চলে। এখন প্রথম কাজ হলো, গত কয়েক দিনের সহিংসতায় লোকসানের মুখে পড়া ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেওয়া।
নতুন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি থাকবেন, তাঁর প্রথম কর্তব্য হলো ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা। এ জন্য তিনি একটি জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠন করতে পারেন। সেই কমিটিতে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের রাখা যেতে পারে। তাঁদের কাজ হবে, যত দ্রুত সম্ভব স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়া।
স্বল্প মেয়াদে যা করা উচিত, তা হলো দ্রুত সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা। ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তায় অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধই ছিল। শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন, তাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।
বড় ব্যবসায়ীরা তাঁদের ক্ষতি কোনো না কোনোভাবে পুষিয়ে নিতে পারবেন; কিন্তু ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনেকটা দিন আনেন দিন খান। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি ও কাঠামোগত সংস্কারেও মনোযোগী হতে হবে। এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো দরকার। আবার রিজার্ভ ধরে রাখতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, প্রবাসী আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এসব দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের বিষয়টি নির্ভর করবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কত দিন স্থায়ী হয়, এর ওপর। এসব সংস্কারপ্রক্রিয়া অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।