মাসুদুর রহমান:
মাসুদুর রহমান:

বাজেট কীভাবে তৈরি ও বাস্তবায়িত হয়, ব্যবসায়ীরা তা জানেন না

৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কী প্রত্যাশা করেন, তা নিয়ে চেম্বারের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে প্রথম আলো। প্রথম সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমানের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতীক বর্ধন।

প্রশ্ন

সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে। এই বাজেটে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা কী চান।

মাসুদুর রহমান: সরকারের বাজেট প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম কথা হলো, বাজেটে আমাদের দাবির বিশেষ প্রতিফলন হয় না। প্রতিবছর চেম্বারের উদ্যোগে প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা হয়; আমরাও অনেক দাবি ও প্রস্তাব পেশ করি; কিন্তু শেষমেশ আমাদের দাবি হারিয়ে যায়। ফলে প্রতিবছর এই প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা করা স্রেফ অর্থ ব্যয় ছাড়া কিছু নয়। বাজেট কীভাবে তৈরি হয়, কীভাবে তা বাস্তবায়িত হয়, এসব বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। যাঁরা করেন, তাঁরাই জানেন।

প্রশ্ন

রাজশাহীতে ভারী শিল্প নেই বলে আমরা জানি। এটি কৃষিভিত্তিক অঞ্চল; কৃষিভিত্তিক শিল্পের কী অবস্থা?

মাসুদুর রহমান: রাজশাহীতে ভারী শিল্প নেই; এই অঞ্চলটি মূলত কৃষিভিত্তিক। দেশের ১৮টি জেলায় মাছ সরবরাহ হয় রাজশাহী থেকে। প্রতিদিন ৬-৭ কোটি টাকার মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের পান ও সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ফলে রাজশাহীতে কেন কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র থাকবে না। রাজশাহী অঞ্চলের আমের খ্যাতি বিশ্বজোড়া; কিন্তু দেশে একটিও আন্তর্জাতিক মানের আমের জুস উৎপাদন হয় না। বাজেটে এসব বিষয় আমলে নিতে হবে; পৃথক বরাদ্দ দিতে হবে।

রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে উঠেছে কৃষি কেন্দ্র করে। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি শস্য উৎপাদন হয় এখানে, সে জন্য এ অঞ্চলকে শস্যভান্ডার বলা হয়। কিন্তু কৃষি ও কৃষি উপজাত দ্রব্যাদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত এখনো দুর্বল। কৃষি ও কৃষিজাত দ্রব্যাদি বিকাশের লক্ষ্যে কৃষি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তাদের কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা দাবি করছি।

প্রশ্ন

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় কি?

মাসুদুর রহমান: সে কথা আর বলতে। আম উৎপাদিত হয় রাজশাহীতে, কিন্তু সেই আম বিদেশে রপ্তানি করতে হলে মান পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়। অথচ রাজশাহীতে ফল গবেষণা কেন্দ্র আছে; সায়েন্স ল্যাবরেটরি আছে; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। উদ্যোগ নিলে তো এরাই আমের মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে; কিন্তু না, দেশের সবকিছু যেন ঢাকায় করতে হবে। সে জন্যই ঢাকার আজ এই অবস্থা।
শুধু আম নয়, মাছের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মাছ রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেশের সাভারে পাঠাতে হয়। এই বাস্তবতায় দেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণ কীভাবে হবে। অথচ সরকার রপ্তানি বৃদ্ধিতে কত কথা বলছে; ব্যবসায়ী নেতারাও অনেক কথা বলছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারের মুখের কথা একরকম, কাজ আরেক রকম; এ ধরনের আমলতান্ত্রিক ও কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় কোনোভাবেই রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব নয়। বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে না। একটি দেশে শুধু একটি শহরকেন্দ্রিক সবকিছু চললে কীভাবে হবে, তা বোধগম্য হয় না। আরেকটি সমস্যা হলো, আমলানির্ভরতা-রাজনীতিকেরা এখন আমলাদের ওপর কথাই বলতে পারেন না। মৎস্য চাষ করেন রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা, অথচ মৎস্য পুরস্কার দেওয়া হয় পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কন্যাকে। তাহলে প্রকৃত মৎস্যচাষিদের মূল্যায়ন কোথায়?

প্রশ্ন

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়ন। রাজশাহীতে কী অবস্থা?

মাসুদুর রহমান: সে কথা আর বলতে। আগেও বলেছি, দেশের সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। এ ক্ষেত্রেও দেখা যায়, দেশে যত ঋণ বিতরণ হয় তার ৭০ ভাগ যদি ঢাকায় হয়, বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে ১৫ ভাগ হয় চট্টগ্রামে আর বাকি ১৫ ভাগ সারা দেশে বিতরণ হচ্ছে। রাজশাহীতে বড় কিছু না হওয়ার পেছনে এটা বড় কারণ; হাতে গোনা দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কারও পক্ষে বড় ঋণ পাওয়া সম্ভব নয়। আরেকটি সমস্যা হলো বেসরকারি সব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায়। রাজশাহীর আঞ্চলিক শাখাগুলোর খুব বেশি ক্ষমতা নেই; তারা বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারে না। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা দরকার; তা না হলে বড় পরিবর্তন হবে না।

প্রশ্ন

রাজশাহী তো সীমান্তবর্তী জেলা। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা কেমন?

মাসুদুর রহমান: এই অঞ্চলের একমাত্র স্থলবন্দর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ। গত বছর একটি নৌবন্দরও চালু হয়েছে। আমরা বলেছি, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য বৈধভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সুলতানগঞ্জ-মায়া বন্দর দিয়েও আমদানির অনুমোদন দেওয়া হোক, কেননা এই পথে আমদানি করলে প্রতি কেজি পণ্যে পরিবহন খরচ কম পড়বে ১৫-২০ টাকা। এতে দেশের মানুষ কম মূল্যে পণ্য পাবে। দেশের জনগণ উপকৃত হবে। সোনামসজিদ ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে সরকার যে রাজস্ব পায়, আমরা একই রাজস্ব দিয়ে বৈধভাবে পণ্য আমদানি করতে চাই। এতে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।

প্রশ্ন

আপনাকে ধন্যবাদ

মাসুদুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ