ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব

এখনই রপ্তানিতে ধস নামবে মনে করছি না

রপ্তানি পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নামবে, এমনটা আমি মনে করছি না। দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নীতি টেকসই হবে কি না, সেটিও এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, বাড়তি শুল্কের চাপ শেষ পর্যন্ত দেশটির ভোক্তার ওপরই পড়বে। ফলে ভোক্তাদের দিক থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ কম দামের বা বেসিক পোশাক বেশি রপ্তানি করে থাকে। সেসব পণ্য খুবই মূল্য সংবেদনশীল। পরিষ্কার করে বললে, বেসিক পোশাকের অনেক বেশি প্রতিযোগিতা থাকায় পাল্টা শুল্ক আরোপের পরও ভোক্তা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম না-ও বাড়তে পারে। কারণ, দাম বাড়ালে বিক্রি কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। সেই ঝুঁকি সহজে নিতে চাইবে না যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যেটি করবে, বাড়তি শুল্কের একটা অংশ নিজেরা বহন করবে। বাকিটা আমাদের মতো উৎপাদকদের দিকে ঢেলে দেবে। যেমনটা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির পর আমরা বাড়তি ব্যয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার জন্য দর-কষাকষি করেছি। সেই দর-কষাকষিতে আমরা কতটুকু সফল হয়েছি, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

পাল্টা শুল্কের চাপে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের ওপর প্রথমেই পোশাকের দাম কমানোর চাপ তৈরি করতে পারে। এখন আমাদের হাতে যেসব ক্রয়াদেশ আছে, সেগুলোর দামও কমাতে বলতে পারে ক্রেতারা। ফলে আমাদের দিক থেকে সম্মিলিতভাবে সেই চাপ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের উচিত বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে হয়তো দেশটির তৈরি পোশাকের কিছু ক্রয়াদেশ সরবে। বাংলাদেশ সেটির সুবিধা পাবে। তবে পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে আমাদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে এসব দেশ। এই তিন দেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে ভারত। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পাল্টা শুল্ক তুলনামূলক কম, ২৬ শতাংশ। তাদের নিজস্ব তুলা উৎপাদন আছে। আবার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা সুবিধা দিয়েছে। সব মিলিয়ে তাদের প্রস্তুতি ভালো থাকায় ভবিষ্যতে ভারতে মার্কিন ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

সবশেষে বলতে চাই, পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আকস্মিক ধস আসবে না। তাই এ নিয়ে এখনই খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। তবে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ