সম্প্রতি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন টেলিনরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিগভে ব্রেক্কে। এ সময় তিনি টেলিযোগাযোগ খাত ও বাংলাদেশে টেলিনরের ব্যবসা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশে টেলিনর সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এবং খুবই ব্যবসা সফল। এই বাজার থেকে বের হওয়া বা অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ দেশে বিনিয়োগের যে ধারা তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন টেলিনরের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিগভে ব্রেক্কে।
বাংলাদেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন কোম্পানিটির মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান। ৩ এপ্রিল রাজধানীতে গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশের অগ্রগতি, স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, টেলিনরের বিনিয়োগ, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
পাকিস্তানের বাজার থেকে টেলিনর বের হয়ে যাচ্ছে। আবার কয়েকটি দেশে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশে একীভূত হওয়া বা বাজার ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে টেলিনরের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই। যেসব দেশে পর্যাপ্ত ব্যবসার সুযোগ ছিল না, সেখানেই টেলিনর একীভূত হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য টেলিনর খুবই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে টেলিনরের জন্য প্রথম ২৭ বছর ছিল প্রবৃদ্ধির। এখন পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতি চলছে, যা আগামী এক বা দুই দশকের মধ্যে হবে।
আলোচনার শুরুতে গত ২৫ বছরে বাংলাদেশের পরিবর্তন প্রসঙ্গে সিগভে ব্রেক্কে বলেন, এ সময়ে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামীণফোন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা অনুপ্রাণিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), কানেকটিভিটি, আইওটি এবং ডেটা নেটওয়ার্ক কভারেজ যখন একত্র হয়, তখন বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটে। বাংলাদেশেও প্রযুক্তিগত এই রূপান্তর ঘটতে পারে। এআই বাস্তবায়ন দ্রুত হবে যদি টেলিকম খাত ও সরকার একসঙ্গে কাজ করে।
টেলিকম খাতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ পরিবেশ প্রসঙ্গে সিগভে ব্রেক্কে বলেন, একেক দেশের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা একেক রকম। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা খুব সহজ বা খুব কঠিন তা বলতে চাই না। তবে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ভালো, নয়তো টেলিনর এখানে থাকত না। বাংলাদেশ থেকে মুনাফা হচ্ছে, সে অর্থে এখানে ব্যবসা ভালো।
সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিটিআরসি ২০২২ সালের ২৯ জুন থেকে প্রায় ৬ মাস গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে অপারেটরটি প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার সিম বিক্রি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ ছাড়া তারা ৩৫ লাখের মতো গ্রাহক হারায়।
টেলিনরের প্রধান কর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা এটা পছন্দ করিনি। আমরা মনে করি এটা অন্যায্য ছিল।’
গ্রামীণফোনে ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের। যার চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
সিগভের সঙ্গে আলোচনায় গ্রামীণ টেলিকম ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গও উঠে আসে। সিগভে বলেন, এ–সংক্রান্ত সংবাদ তারাও পড়েছেন। কিন্তু তারা এসবের অংশ নন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ব্যবসার ওপর নজর দিচ্ছি। টেলিনর গ্রামীণফোনের বেশির ভাগ মালিকানার ওপর নজর দিচ্ছে এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। খবরে যা এসেছে, এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।’
বিভিন্ন দেশে টেলিনরের ফাইভজি প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশে ফাইভজি চালুর বিষয়ে সিগভে ব্রেক্কে বলেন, নরডিক অঞ্চলের দেশগুলোতে গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ফাইভজি সেবা চালু আছে। সেসব দেশের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধারণ গ্রাহকদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফোরজির সঙ্গে ফাইভজির খুব একটা পার্থক্য নেই। ফাইভজি মূলত বিশেষায়িত ব্যবহারের জন্য। যেমন বন্দর, বিমানবন্দর, হাসপাতাল ও শিল্পকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনতে ফাইভজি ব্যবহার করা হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের সঙ্গেও এবার সাক্ষাৎ করেছেন টেলিনরের প্রেসিডেন্ট। সে আলোচনাতেও ফাইভজির প্রসঙ্গটি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফাইভজি কাজে লাগবে এমন জায়গা খুঁজে বের করতে।
সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। সিগভের মতে, সেটা টেলিকম ও সংশ্লিষ্ট খাতের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। সবাইকে যদি ডেটার আওতায় আনতে হয় এবং নতুন নতুন ডেটা পরিষেবা চালু করতে হয়, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে।