হুট করে রপ্তানি প্রণোদনা কমানো হয়েছে, সিদ্ধান্ত সময়োচিত হয়নি

মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
ছবি: সংগৃহীত

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না, সেটা আমরা সবাই জানি। সেই প্রক্রিয়া একসময় শুরুও করতে হবে। কিন্তু যেভাবে গতকাল হুট করে খাতভেদে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা সময়োচিত হয়নি।

সবচেয়ে বড় হতাশার কারণ হলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ী বা শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে এক দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

অথচ ২০২৩ সালের আগস্টে বলা হয়েছিল, রপ্তানি খাতে বর্তমানে যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ জুন পর্যন্ত আমরা সেভাবে সব চুক্তি করেছি, সুতা কিনেছি। উল্লেখ করা দরকার, বস্ত্র খাতের প্রণোদনা মূলত সুতার দামের মধ্যে চলে যায়। ফলে এখন হুট করে প্রণোদনা বাতিলের সিদ্ধান্তে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রণোদনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে কারণে দেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৫৬ শতাংশ আর নিটিংয়ের ৭০ শতাংশ প্রণোদনা আওতার বাইরে চলে গেল। এখন দেশের বাজারে সুতার দাম বেড়ে গেলে আমাদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে সুতা আনতে হবে। এতে দেশের সুতাশিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে।

কথা হচ্ছে, স্বাভাবিক সময় হলে এ সিদ্ধান্ত অতটা প্রভাব ফেলত না। কিন্তু কোভিডের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এরপর ইসরায়েল-হামাস সংকট ও লোহিত সাগরপথে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতির গতিও কমে গেছে। বস্ত্র খাতের রপ্তানি কার্যাদেশ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। এই বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্ত সময়োচিত হয়নি।

দুই বছর ধরে ডলার–সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি বিনিময়মূল্যের ভিন্নতার কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা পণ্য রপ্তানি করে ডলার বিক্রি করছি ১০৯ টাকার কিছু বেশি দরে। আবার সেই আমরা যখন ডলার কিনতে যাই, তখন ১১৮ থেকে ১২২ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে প্রতি মাসেই আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে।

সেই সঙ্গে গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করার কারণে বস্ত্রশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কারখানা সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। অথচ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা দিয়ে সরকার গত বছর গ্যাসের দাম অনেকটা বৃদ্ধি করে।

সরকারের কাছে আমরা এখনো প্রণোদনার ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাব। সরকার না দিলেও সুতার দামের মাধ্যমে স্পিনিং মিলগুলোকে সহায়তার অর্থ দিতে হয়েছে।

এসব কিছুর ফলে আমাদের রপ্তানির সক্ষমতা কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এমন এক সময় তা করা হলো, যখন রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য আমরা সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছি।

মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ