সাক্ষাৎকার

বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে 

দেশের অর্থনীতি এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নির্বাচনের পর অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের আশু করণীয় কী, নতুন কোনো চাপ তৈরির শঙ্কা রয়েছে কি না, এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন।  

প্রশ্ন

এক দিন পরই আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগে দেশের অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম: নির্বাচনের আগে সামগ্রিক যে পরিস্থিতি, সেটিকে আমার কাছে শান্তিপূর্ণ মনে হচ্ছে না। একধরনের শঙ্কা রয়েছে মানুষের মনে। নির্বাচন হয়ে যাবে, সেটি নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। কিন্তু নির্বাচন–পরবর্তী পরিস্থিতি কী হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে কি না, এসব নিয়ে শঙ্কা আছে। এ ধরনের শঙ্কা দেশের সামগ্রিক ও অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর নয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থে সামগ্রিকভাবে দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

প্রশ্ন

অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী মনে করেন?

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম: আমার কাছে মনে হয়, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি ও বৈষম্য বেড়ে যাওয়া। মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন করে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বলে আমার ধারণা। বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে দারিদ্র্য নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য এখনো জানা যাচ্ছে না। তাই কত লোক নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এ ছাড়া দেশে বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গিনি সহগের মাত্রা থেকে আমরা সেটি বুঝতে পারছি। আঞ্চলিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতিকে এখনই অ্যাড্রেস করা না গেলে তাতে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর বাইরে প্রবাসী আয়, খেলাপি ঋণ, রপ্তানি আয়, লেনদেন ভারসাম্যসহ অর্থনীতির সূচকগুলোও সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। তাই সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন হবে।

প্রশ্ন

এসব সমস্যার সমাধান সরকার কীভাবে করবে?

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম: অর্থনীতির চলমান সমস্যাগুলো সমাধান করতে হলে জোরালো ও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন–পরবর্তী সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ কতটা নিতে পারবে, তা এখনই বলা মুশকিল। আর পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে নির্বাচন–পরবর্তী সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর, যা নিয়ে বেশির ভাগ মানুষের শঙ্কা রয়েছে।

প্রশ্ন

নির্বাচনের পর সংকট কি কমবে, নাকি আরও বাড়বে—আপনার কী মনে হয়?

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম: নির্বাচন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটি রাজনীতিবিদদের বিষয়, তাঁরাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

প্রশ্ন

কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে? আপনি কি এ ধরনের কোনো আশঙ্কা করছেন?

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম: যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েই বেশি আলোচনা রয়েছে। নির্বাচনের পর নিষেধাজ্ঞা আসবে, কি আসবে না—সেটি নিয়ে আমার কোনো ভাবনা বা আশঙ্কা নেই। তবে আমি মনে করি, যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি লাগবে। এমনিতেই আমাদের রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো নয়। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা এলে রপ্তানি খাতসহ পুরো অর্থনীতি ধাক্কা খাবে। তাই আমি মনে করি, অর্থনীতিসহ যেসব বিষয়ে সমস্যা আছে, সেগুলো অ্যাড্রেস করা দরকার। 

প্রশ্ন

আপনি বলছেন, মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতিতে বড় উদ্বেগ বা সমস্যা। নির্বাচনের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন?

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। রাতারাতি কেউ এটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবে, সেটিও বাস্তব নয়। তবে ডলার–সংকটসহ যেসব কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে, সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্যের মূল্য যাতে না বাড়ে, সে জন্য প্রয়োজনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যেতে পারে। অনেকেই এখন পণ্যের মূল্যের জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। আমি মনে করি, দেশে বিদ্যমান যেসব আইন আছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগের প্রতি বিশেষ জোর দিতে হবে।