দেশীয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় ও বৈশ্বিক—উভয় ধরনের বাজারে কাজ করে। আমাদের কাজের লাইফলাইন হচ্ছে ইন্টারনেট। সেখানে এক মিনিটের জন্যও ইন্টারনেট না থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। চলমান পরিস্থিতিতে ১৩ দিন ধরে ইন্টারনেটের গতি শূন্য বা ধীর। এই সময়ে প্রযুক্তি খাতে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজার মিলিয়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গত কিছুদিনের অস্থিরতায় আমাদের নানামাত্রিক ক্ষতি হয়েছে। যেমন আমরা যেসব বিদেশি গ্রাহকের জন্য কাজ করি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে তারা তো বেশি দিন অপেক্ষা করবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বিদেশি গ্রাহক কমছে। গ্রাহক চলে যাওয়ার এ ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকবে। আবার চলমান অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভাবনাও কমবে। ফলে স্থানীয় অনেক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
দেশে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসার আকার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। এ খাতে কর্মসংস্থান রয়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষের। কিন্তু আমরা হিসাব করে দেখেছি, চলমান ঘটনাপ্রবাহের কারণে প্রযুক্তি খাতে প্রায় ২৫ শতাংশ কর্মসংস্থান কমবে; নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমবে। এতে শুধু এক বছরে আমাদের সার্বিক ক্ষতি হতে পারে ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ অনেক সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও আরেকটা বড় ক্ষতি হয়েছে। এটা হচ্ছে প্রযুক্তি খাতের চালিকা শক্তি আমাদের মেধাবী তরুণেরা। চলমান পরিস্থিতিতে এই তরুণ শ্রেণির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। এখন যদি চাকরি ছাঁটাই বা অন্যান্য কারণে এই তরুণেরা কাজে নিরুৎসাহিত হয় কিংবা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়; তাহলে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়ব। এটাই এখন বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা সরাসরি কোনো প্রণোদনা চাই না। তবে বেশ কিছু নীতিসহায়তা চাই। এর মধ্যে প্রথম দাবি হচ্ছে ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আগামী এক বছর বিনা মূল্যে ইন্টারনেট–সেবা দেওয়ার প্রস্তাব করছি। আমরা থোক বরাদ্দ চাই না; রপ্তানির বিনিময়ে যে প্রণোদনা রয়েছে, সেটি বাড়িয়ে অন্তত এক বছরের জন্য হলেও ২০ শতাংশ করা হোক। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তরুণ মেধাগুলোকে আবার উজ্জীবিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাসেল টি আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)