ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ রাজধানীতে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এ নিয়ে কথা বলেছেন সংগঠনটির সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর শাহ।
দ্য ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তি হচ্ছে এ বছর। এ জন্য কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে?
নাসের এজাজ বিজয়: দুটি দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় আমরা এফআইসিসিআইয়ের ৬০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান করছি। রবি ও সোমবার দুই দিনের আয়োজনে নানা ধরনের বিষয় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানের দুটি দৃষ্টিভঙ্গির একটি হলো ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন মাত্র সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়। এখন ২০০-এর মতো প্রতিষ্ঠান এই সংগঠনের সদস্য। গত ৬০ বছরের পথ কীভাবে চলেছে, এর ধারাবাহিকতায় এই অনুষ্ঠান।
দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি হলো অনুষ্ঠানে একটি বিনিয়োগসংক্রান্ত প্রদর্শনী হবে। সেখানে এফআইসিসিআইয়ের ২০টি সদস্য প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে এফআইসিসিআইয়ের সদস্যদের ভূমিকা কেমন, তা তুলে ধরা হবে। রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে এই অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের কৌশলগত সহযোগী হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
দুই দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্প তুলে আনা হবে। এফআইসিসিআই এই প্রবৃদ্ধিকে কীভাবে দেখে তা বলা হবে। এফআইসিসিআইয়ের ৬০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনটি বিষয়কে থিম হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ফরএভার, ফিউচারস ও ফরওয়ার্ড।
যদি বাংলাদেশের জিডিপিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে থাকে, তাহলে ২০৩১ সালের মধ্যে এ দেশের অর্থনীতির এক লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।নাসের এজাজ বিজয়, সভাপতি, এফআইসিসিআই ও সিইও, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
অনুষ্ঠানের অন্য বিশেষত্ব কী?
নাসের এজাজ বিজয়: অনুষ্ঠানে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের গল্প শোনাতে দুজন স্বনামধন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী ঢাকায় আসছেন। তাঁদের একজন হলেন কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। অন্যজন হলেন তুরস্কের এইগ্যাজের গ্রুপ সিইও মেলি পোয়েরেজ।
এ ছাড়া দুই দিনে দুটি সেমিনার হবে। একটি সেমিনার হবে পরিবেশ রক্ষায় এফআইসিসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো কী করছে, অর্থনীতিতে সবুজ প্রবৃদ্ধির ভূমিকা কী—এসব নিয়ে আলোচনা। দ্বিতীয় দিনে অন্য সেমিনারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কী করা উচিত, তা আলোচনা হবে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে করব্যবস্থা ও বিনিয়োগ বিষয়ে দুটি গবেষণা বই প্রকাশ করা হবে। কর খাতে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা কী বলছেন, তা থাকছে একটি বইয়ে। অন্য বইয়ে পরিবেশ রক্ষায় এফআইসিসিআই সদস্যরা কী ভূমিকা রাখছেন, তা রয়েছে।
৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও একজন ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রমের জন্য আরও একটি প্রতিষ্ঠান ও একজন ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এফআইসিসিআইয়ের সদস্যদের ভূমিকা কী?
নাসের এজাজ বিজয়: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এফআইসিসিআইয়ের সদস্যরা বেশ ভালো ভূমিকা রাখছেন। আমি কিছু উদাহরণ দিতে পারি। যেমন এ দেশে যত কর আদায় হয়, তার ৩০ শতাংশ দেয় এফআইসিসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশে যত বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তার ৯০ শতাংশই আনেন এফআইসিসিআইয়ের সদস্যরা। এফআইসিসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছে। এ দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ব্যবসায়িক উদ্ভাবনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিন দশক আগে এ দেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রধান নির্বাহী হিসেবে বাংলাদেশিদের পাওয়া যেত না। এখন গ্রামীণফোন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোসহ অন্তত ১৫টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী হিসেবে বাংলাদেশিরা কাজ করছেন।
হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতিতে কেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে আপনি মনে করেন?
নাসের এজাজ বিজয়: হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিকে রাজনীতির বাইরে চিন্তা করলেও তা দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করে। আমরা যদি এই ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করি, তাহলে তা দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনিতেই গত বছর সারা বিশ্বে আগেরবারের চেয়ে ১২ শতাংশের মতো বিদেশি বিনিয়োগ কম হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
নাসের এজাজ বিজয়: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল সম্ভাবনা আছে। তবে সংস্কারেরও প্রয়োজন আছে। স্বাধীনতার পরপর এ দেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তা ২০০৭ সালে বেড়ে হয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এরপর এক যুগের মধ্যে অর্থাৎ কোভিডের আগপর্যন্ত দেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ বিলিয়ন বা ৩২ হাজার ৪০০ ডলারে। এই সময়ে অর্থনীতির আকার চার গুণের বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যদি ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে থাকে, তাহলে ২০৩১ সালের মধ্যে এ দেশের অর্থনীতির আকার এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। এই পথযাত্রায় আমাদের সংস্কার করতে হবে। অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতেই সংস্কার দরকার, যাতে বিনিয়োগ আরও বাড়ে। আমরা যখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলি, তাঁরা এ দেশের সম্ভাবনার কথা বলেন। সম্ভাবনা আছে বলেই দেশের বিভিন্ন খাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে। দক্ষতা ও কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের এগিয়ে নিচ্ছে।