ফরমান আর চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক
ফরমান আর চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক

ভোক্তা ও এসএমই ঋণে গুরুত্ব দিচ্ছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক

১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৩০ বছরে পদার্পণ করছে। ব্যাংকটির নানা কার্যক্রম ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরমান আর চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব।

প্রশ্ন

শুরুর দিকে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের পরিচিতি ছিল। নানা উদ্যোগের পর এটি ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি পায়। এখন কী অবস্থা? 

ফরমান আর চৌধুরী: আমাদের ব্যাংকের শাখা,এজেন্ট নেটওয়ার্ক বড় একটি শক্তি। সারা দেশে আমাদের ২২৫টি শাখা ও ৭৪৫টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। ফলে আমরা ৩৬ লাখ গ্রাহক পেয়েছি। আমাদের ব্যাংকে আমানত রয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা, বিনিয়োগ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। গ্রাহকসেবা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। ব্যাংক সঠিক পথে আছে, সামনে আরও এগিয়ে যাবে।

প্রশ্ন

২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে আপনি ব্যাংকটির দায়িত্বে। এ সময়ে ব্যাংকের পরিস্থিতি কেমন হয়েছে।

ফরমান আর চৌধুরী: ২০১৯ সালে আমানত ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে বিনিয়োগ ২৮ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি শাখা ও এজেন্ট নেটওয়ার্ক ও মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে আমরা ব্যাংকে কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করেছি। ফলে ব্যাংকের সব ধরনের বিনিয়োগ কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদিত হচ্ছে ও সুরক্ষিত থাকছে। যা ব্যাংকটিকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। আগে আমরা করপোরেট ব্যাংকিংয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছিলাম। দুই-তিন বছর ধরে ভোক্তা ঋণ, কৃষি, এসএমই ও গ্রামীণ অর্থায়নে নজর বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ অর্থায়নে ৬০ হাজার নারী গ্রাহক আছেন, যেখানে ৪২৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। ফলে ধীরে ধীরে শতাংশের হিসাবে করপোরেট বিনিয়োগের হার কমে আসছে। এ ছাড়া আমাদের আই ব্যাংকিং হিসাবে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি লেনদেন হচ্ছে। আমাদের মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ইসলামিক ওয়ালেটে ১ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। যাঁরা নিয়মিত অর্থ স্থানান্তর, পরিষেবা বিল, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। আমাদের ক্রেডিট কার্ড লা-রিবা দেশের জন্য এক অনন্য সুদবিহীন সেবা। এই কার্ড বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা যায়। কার্ড গ্রাহকেরা বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিনা মূল্যে লাউঞ্জ–সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন।

প্রশ্ন

দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলারের সংকট চলছে। এখন কিছু ব্যাংক টাকারও সংকটে পড়েছে। আপনারা এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিচ্ছেন।  

ফরমান আর চৌধুরী: আমাদের করপোরেট গ্রাহকদের বড় অংশ পোশাক খাতের। তাদের রপ্তানি আয় ভালো। এ ছাড়া আমরা রপ্তানিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রবাসী আয় ভালো পাচ্ছি। আমদানিতে যে ডলার প্রয়োজন হয়, তা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে পূরণ হচ্ছে। আমাদের ব্যাংকের টাকার সংকট কখনো হয়নি। সেবার মান, ব্যাংকের ভাবমূর্তির কারণে সব সময় আমাদের আমানতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে পর্ষদে পরিবর্তন আনার পর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছিল। এসব আমানত আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে।

ফরমান আর চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।
প্রশ্ন

পুরো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আপনাদের ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ ঊর্ধ্বমুখী। কেন এমন হচ্ছে। 

ফরমান আর চৌধুরী: আমাদের ব্যাংকের আকার বেশ বড়। শিল্পের পাশাপাশি পোশাক খাতের কিছু ঋণ খারাপ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আগের বেশ কিছু ঋণ খারাপ ছিল, এসব নিয়মিত করা হয়েছিল। এখন এর অনেকগুলো খারাপ হয়ে পড়ছে। এর ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন

আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আপনাদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্বতন্ত্র পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সামনে পরিকল্পনা কী?

ফরমান আর চৌধুরী: আমরা আমানতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চাই। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। ভোক্তা ঋণ ও এসএমই খাতে ঋণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব নিয়মকানুন মেনে ব্যাংকিং করার চেষ্টা চলছে। এখন সব হিসাব খোলা কেন্দ্রীয়ভাবে হচ্ছে। ফলে কোনো ধরনের ত্রুটি হওয়ার সুযোগ কমে এসেছে।