দেশের সব বড় ব্যবসাই এখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। ই-কমার্স ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা তো আছেই, সেই সঙ্গে সব বড় ব্যবসাই এখন কোনো না কোনো ভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই বাস্তবতায় দীর্ঘদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে ব্যবসা–বাণিজ্যে বড় সংকট হয়।
দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। অটোমেটেড লেনদেন হচ্ছে। আর্থিক লেনদেন তো বটেই; এখন দেশের প্রায় সব সেবাই ইন্টারনেটনির্ভর। কারখানার উৎপাদন অনেকাংশে অটোমেটেড। এমনকি শিক্ষা কার্যক্রমও অনেকাংশে ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট ছাড়া কীভাবে চলা সম্ভব।
ইন্টারনেট না থাকলে কত ক্ষতি হয়, তার হিসাব সেভাবে না থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ইন্টারনেটনির্ভরতার এই পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায় তার ক্ষতি কতটা হতে পারে।
দেশের ফ্রিল্যান্সিং ও সফটওয়্যার রপ্তানিকেন্দ্রিক ব্যবসা বিদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। এই ব্যবসাটা চলে মূলত আস্থার ভিত্তিতে। এভাবে দীর্ঘদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অনেক ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। সেটা হলে ডলারের প্রবাহে প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে ই-কমার্স খাতে যে বিদেশি বিনিয়োগ আছে, তাতে প্রভাব পড়তে পারে। আইসিটি (তথ্য ও কম্পিউটার প্রযুক্তি) খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার বিষয়টি এখন বিবেচনায় আসবে।
সরকার কিন্তু বিদ্যুৎ বা গ্যাস বন্ধ করেনি; অর্থাৎ এসব আমাদের জীবনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এখন ইন্টারনেটও সেই পর্যায়ে গেছে। তাকে সেভাবেই বিবেচনা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আংশিকভাবে ইন্টারনেট চালু হয়েছে; এখন যত দ্রুত সম্ভব তা পুরোপুরি চালু করা উচিত।
ইন্টারনেটের এই সর্বব্যাপক প্রয়োজনীয়তার মধ্যে এ কথাও বলা দরকার, জননিরাপত্তা সবার আগে। সেই প্রয়োজনে সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যে কারণেই ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, তার প্রভাব একই হবে; অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুজব ছড়ায় ঠিক। এটাও সত্য, গুজব প্রতিরোধ বা তার সত্যতা যাচাইয়ে আবার ইন্টারনেটই ভরসা। ইন্টারনেট বন্ধ রেখেও কিন্তু গুজব একেবারে বন্ধ করা যায়নি। মানুষ তখন একরকম অন্ধকারে থাকে, সেটাও গুজবের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। সে জন্য এখন উচিত হবে, যত দ্রুত সম্ভব ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক করা।
অন্যদিকে ইন্টারনেট এভাবে বন্ধ করার টেকনিক্যাল প্রভাবও আছে। ইন্টারনেট চাইলেই হুট করে বন্ধ বা চালু করা যায় না। এ ছাড়া এখন যোগাযোগের আরও অনেক মাধ্যম আছে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব।
পরিশেষে বলব, সরকার একসময় ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলত; এখন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই।
বি এম মইনুল হোসেন: অধ্যাপক, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।