বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ব্যাংক এবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দেবে বলে ধারণা করা যায়। সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনাও আছে। সরকার বাজেটে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এসব করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অনেক দিন ধরেই দেশে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের কাছাকাছি। গত মাসেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। মূল্যস্তর উঠে গেছে। সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। এই বাস্তবতায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বড় ধরনের চাপের মুখে আছেন, প্রভাব পড়ছে তাঁদের জীবনযাত্রার মানেও।
এই বাস্তবতায় আমি মনে করি, এখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত; সে জন্য প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ছাড় দিতে হলেও সমস্যা নেই, মূল নজর দেওয়া উচিত স্থিতিশীলতা অর্জনে।
কিন্তু সমস্যা হলো, বাংলাদেশের মতো দেশে কেবল মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তার সঙ্গে সমন্বিতভাবে অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মুদ্রানীতির প্রভাব সীমিত হতে বাধ্য। মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাজস্বনীতি, ব্যাংক খাতের সংস্কার বিশেষ করে খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলা করা না হলে কেবল ঋণের সুদ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বিশেষ করে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলা করা না হলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঋণের সুদহার কমানো সম্ভব নয়। ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ জমা ও প্রভিশন রাখতে হয়, এরপর যা থাকে, তা থেকে ঋণ দিয়ে মুনাফা করতে হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহার এখন নীতি সুদ ও খেলাপি ঋণের ওপর নির্ভর করছে। ঋণের সুদহার সীমা ছাড়িয়ে গেলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে; এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে, কমে যাবে সরবরাহ। এতে মূল্যস্তর ওপরে উঠে যায়, প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে।
সেই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের যথাযথ তথ্য-উপাত্ত না থাকলে বাজার ব্যবস্থাপনা করা যায় না। সেই সঙ্গে সিন্ডিকেটের প্রভাব তো আছেই।
এই বাস্তবতায় আশা করব, মুদ্রানীতিতে কেবল মুদ্রা প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে তার সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ও আলোকপাত করা হবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের সংস্কার। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ও অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বিভাজন করা হলো; কিন্তু দেখা গেল, বড় কোম্পানির সুদ মওকুফ করা হচ্ছে।
মোস্তাফিজুর রহমান: সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)