হাইব্রিড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক কমালে রাজস্ব আয় বাড়বে

গত বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে করপোরেট কর কমানোসহ ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেট তাঁদের হতাশ করেছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মিল খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির আটজন ব্যবসায়ী তাঁদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন ফয়জুল্লাহ

আবদুল হক

ডলারের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে সরকার এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে গাড়ির সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার চিন্তাভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু করোনার পরে এ খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা মাথায় রেখে সরকার হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক না বাড়ালে ভালো হতো। তাতে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের যেমন কিছুটা সুবিধা হতো, সরকারেরও শুল্ক আয় বাড়ত। হাইব্রিড গাড়ি আমদানি থেকে সরকার ভালো অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে থাকে। আমাদের দেশে বার্ষিক ১৫-২০ হাজার গাড়ির বাজার আছে। বর্তমানে গাড়ির বাজারের বড় একটা অংশই হাইব্রিড গাড়ির। জ্বালানিসাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসব গাড়ির চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ২০০০ সিসির ঊর্ধ্বে গাড়ির ক্ষেত্রেও বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার করা যেতে পারে। তাহলে বাজারে গাড়ি সরবরাহের খুব বেশি কমতি হবে না। সরকার এই বিষয়গুলো বিবেচনা করলে সবার জন্য একটা ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ তৈরি হবে।

বাজেটের আগে সরকারের সঙ্গে যখন কথা হয় তখন আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলাম। তার সবকিছু বাজেটে প্রতিফলিত না হলেও সরকার চেষ্টা করেছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দামি গাড়ি আমদানিতে বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত খারাপ কিছু নয়। তবে বাজার যেহেতু করোনার পরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। সুতরাং, বাজারের ওপর একসঙ্গে এত চাপ না দিয়ে সামগ্রিক বিবেচনায় কিছুটা ছাড় দেওয়া দরকার ছিল।

শুধু সংযোজন করে তো কোনো শিল্প টিকে থাকতে পারে না। সে ক্ষেত্রে হয় আমাদের গাড়ি তৈরি করতে হবে, অন্যথায় আমদানি না করে উপায় নেই। আবার আমাদের গাড়ির বাজার বেশি বড় না হওয়ায় কোম্পানিগুলোর উৎপাদনে আগ্রহ কম। এখন যে বার্ষিক বাজার আছে, সেটা যদি ১ লাখে উন্নীত হয় তাহলে উৎপাদনে আগ্রহ দেখাতেন অনেকে। কিন্তু ছোট পরিসরে মিৎসুবিশি ছাড়া আর তেমন কেউ উৎপাদনের চিন্তা করছে না। বাজার বড় করতে হলে এখানে একটা মৌলিক পরিবর্তন দরকার, পাশাপাশি দেশের গ্রামে–গঞ্জে গাড়ির চাহিদা থাকতে হবে।

সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে অটোমোবাইল এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে যদি নজর দিই তাহলে দেখা যাবে টাটার মতো প্রতিষ্ঠান ছোট গাড়ি বানানো বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা ট্রাক-লরি এসব বানাতে বেশি মনোযোগী। সে ক্ষেত্রে আমাদের যে বাজার তাতে উৎপাদনে গিয়েও টিকে থাকা বেশ কষ্টকর হবে। সুতরাং, বাজারটা মোটামুটি চাঙা রাখতে গেলে কিছু পরিমাণে গাড়ি আমদানির বিকল্প নেই।