অভিমত

সংস্কারের চাপ তৈরি হবে

এলডিসি উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এটা যেমন একদিকে মর্যাদার, তেমনি অন্যদিকে ঝুঁকিরও। উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা হারাবে। আবার নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কী ঘটবে বা বাংলাদেশের করণীয় কী, তা নিয়ে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ কে এ এস মুরশিদ।
কে এ এস মুরশিদ
কে এ এস মুরশিদ

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে এ সুপারিশ বেশ প্রত্যাশিত। কয়েক বছর আগে থেকেই আমরা এমন প্রত্যাশা করে আসছিলাম। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় এমনিতে ভালো আছে। বিশেষ করে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৬টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। এবার এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা না হলেই বরং হতাশ হতাম।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি সুসংহত এমন কোনো দেশ নেই, যারা এলডিসি মর্যাদায় আছে। বাংলাদেশের এ উত্তরণে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এ ছাড়া বছরের পর বছর এলডিসি মর্যাদায় থাকাও সম্মানজনক নয়। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। এ সময়ে বিশেষ করে অর্থনীতিতে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ।

এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। পর্যটনের বিকাশও হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধায়। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারেই শুল্কমুক্ত সুবিধায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। রপ্তানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এসব দেশে পণ্য রপ্তানি করতে গেলে শুল্ক বেশি দিতে হবে। তবে এ নিয়ে ইইউর সঙ্গে দর-কষাকষি করতে হবে।

করোনার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এমনিতেই অসুবিধার মধ্যে আছে। এ মুহূর্তে হয়তো তারা আলোচনা করতে চাইবে না। আমাদের হাতেও অনেক সময় আছে। আমরা আরও আট-দশ বছর সময় পাব। তাই দুই-এক বছর পরও তাদের সঙ্গে দর-কষাকষির আলোচনা শুরু করলে সমস্যা নেই।

তবে বাজারসুবিধার প্রভাব এড়াতে এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে সহজে কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইবে না। বর্তমান বাজারও রাতারাতি অন্যের হাতে চলে যাবে না।

ওষুধশিল্পেও প্রভাব পড়তে পারে। তবে যেসব ওষুধ এখন বানানো হয়, সেসব ওষুধে সমস্যা হবে না। মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দিতে হবে না। কিন্তু নতুন ওষুধের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে।

এ ছাড়া নিজেদের প্রতিযোগিতাসক্ষম করার স্বার্থে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে বড় বড় সংস্কার লাগবে। সাধারণত আমরা যেসব সংস্কার চাই না, এখন সেসব সংস্কারের চাপ তৈরি হবে।

আমি মনে করি, তিনটি খাতে সংস্কার প্রয়োজন। প্রথমত, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংক খাতের সংস্কার; দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোথায় সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তৃতীয়ত, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

কে এ এস মুরশিদ:মহাপরিচালক, বিআইডিএস