রাজধানীর পুরান ঢাকার রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পেতেই পেরিয়ে গেছে আট বছর। গত ৩ জানুয়ারি প্রকল্পটির পরিচালক নিয়োগ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। যদিও কোনো অর্থ বরাদ্দ মেলেনি। আগামী বাজেট অর্থাৎ, জুলাই মাসে টাকা পেলে জমি অধিগ্রহণ শুরু করার পরিকল্পনা করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
সব মিলিয়ে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম রাসায়নিক পল্লিতে যাওয়া এখনো বহুদূরের বিষয়। যদিও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গতকাল বৃহস্পতিবার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন।
পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নিতে ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লি’ নামের ২০২ কোটি টাকার একটি অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নে মাত্র কাজ শুরু করেছে বিসিক। এর আওতায় কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে একটি পল্লি গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে ৯৩৬টি প্লট পাবেন ব্যবসায়ীরা। ২০২১ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর। ২০১১ সালে প্রকল্পটির বিস্তারিত পরিকল্পনা বা ডিপিপি তৈরির কার্যক্রম শুরু করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বিসিক। ২০১৫ সালে বিসিক একটি ডিপিপি তৈরি করে, যেখানে কেরানীগঞ্জের সোনাকান্দা মৌজায় ২০ একর জমিতে রাসায়নিক পল্লি তৈরির কথা বলা হয়েছিল। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। প্রকল্পে বহুতল ভবন তৈরি করে কারখানা ও গুদাম সরানোর কথা বলা হয়েছিল। প্রকল্পের ব্যয় বহনের কথা ছিল ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা বহুতল ভবনে রাসায়নিক কারখানা ও দোকানের বিষয়ে আপত্তি তোলেন। ফলে ওই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। ২০১৭ সালের মার্চে আবার নতুন একটি ডিপিপি তৈরি করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বিসিক, যেখানে কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নে রাসায়নিক পল্লি স্থাপনের কথা বলা হয়। ডিপিপি যাচাই-বাছাই করে শিল্প মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পরবর্তী বাজেটে প্রকল্পের বরাদ্দ মেলে। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ নেই। চলতি বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বই ঘেঁটে এ প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
রাসায়নিক পল্লি প্রকল্পের পরিচালক সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া ও জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ করে রাখছি। প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ পেলেই যাতে দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করা যায়।’
অবশ্য কোনো প্রকল্প শুরু করলে সেটা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বিসিকে নিয়মিত ঘটনা। সংস্থাটির বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ প্রবল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসনে দীর্ঘসূত্রতা একটি স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু নিমতলীর মতো ঘটনার পরে প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদন করতেই সাত–আট বছর লেগে যাওয়া দায়িত্বে অবহেলা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও দীর্ঘসূত্রতার ফল। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলো কোনো পরিবর্তন আনতে বড় কোনো ট্র্যাজেডির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।’