>বাজেটের কারণে করের চাপ বাড়ায় এরই মধ্যে বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম ৫০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া ভ্যাটের সঙ্গে ৫ শতাংশ আগাম কর বাড়ায় তাতে কোম্পানিগুলো তারল্যসংকটে পড়তে পারে বলে জানান খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ নিয়ে কথা বলেছেন ক্রাউন সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসুদ খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন।
প্রথম আলো: বাজেটের কর প্রস্তাব ও নতুন ভ্যাট আইনের কারণে সিমেন্ট খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে?
মাসুদ খান: বাজেটে প্রস্তাবিত নতুন কর প্রস্তাব ও ভ্যাট আইনের কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ করসংক্রান্ত নতুন প্রস্তাবের ফলে এ খাতের কোম্পানিগুলোর খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আগে থেকেই এ শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ও স্থানীয়ভাবে বিক্রি পর্যায় মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধ করত কোম্পানিগুলো, যা বছর শেষে আয়করের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার নতুন বিধান করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অগ্রিম ও উৎসে কর বাবদ যে কর আদায় হবে, বছর শেষে কোনো কোম্পানির আয়কর তার কম হওয়ার সুযোগ নেই। যদি কম হয়, তাহলে আদায় করা অগ্রিম কর ও উৎসে করকে ন্যূনতম কর হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বর্তমানে সিমেন্ট খাতে যে প্রতিযোগিতা, তাতে কোম্পানিগুলো বাজার ধরে রাখতে ন্যূনতম লাভে ব্যবসা করছে। তাই দেখা যাচ্ছে, কোনো কোম্পানির মুনাফা না হলেও সেই কোম্পানিকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ কর দিতে হবে, যা সমন্বয় করার জন্য ন্যূনতম ৪০ শতাংশ কর–পূর্ববর্তী আয় করতে হবে। সেই সঙ্গে মোট মুনাফার হার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে, যা অসম্ভব।
প্রথম আলো: কিন্তু আমরা তো দেখলাম বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম ৫০ টাকা করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিল্পমালিকেরা। দাম বাড়ানোর পরও কি করের বাড়তি চাপ থাকবে?
মাসুদ খান: যদি বাড়তি দাম কার্যকর করা সম্ভব হয়, তাহলে হয়তো করের বোঝা খুব বেশি বাড়বে না কোম্পানিগুলোর। কিন্তু বর্ধিত দাম কার্যকর করা যাবে কি না বা শেষ পর্যন্ত ওই দাম টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ এ খাতে বর্তমানে অসম এক প্রতিযোগিতা চলছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তাই হয়তো দেখা যাবে, বাজার ধরে রাখতে কেউ কেউ নানা ধরনের ডিসকাউন্ট অফার দিচ্ছে। তখনই এ বর্ধিত দাম টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে। সেটি হলে ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলে যাবে।
প্রথম আলো: নতুন ভ্যাট আইনের কোনো প্রভাব কি এ খাতে পড়েছে?
মাসুদ খান: নতুন ভ্যাট আইনে এ খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি) আরোপ করা হয়েছে। কাঁচামাল আমদানি পর্যায়েই এ কর আদায় করা হবে। বাড়তি এই ৫ শতাংশ আগাম কর দিতে হলে কোম্পানিগুলোকে ঋণ করতে হবে বা অন্য কোনো খরচ কমিয়ে এ টাকা দিতে হবে। তাতে করে কোম্পানির নগদ অর্থ সরবরাহের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রথম আলো: কিন্তু আমরা তো দেখছি, এ খাতে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করছেন কেন?
মাসুদ খান: এ কথা ঠিক, এ খাতে নতুন কারখানা গড়ে তোলার পাশাপাশি বিদ্যমান কোম্পানিগুলোও কারখানা সম্প্রসারণ করছে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একেকজনের দেখাদেখি আরেকজন বিনিয়োগে আগ্রহী হন। যথাযথভাবে বাজার গবেষণা করে বিনিয়োগ হয় খুব কম। এ কারণে দেখা যায়, পুরো খাতেই একধরনের অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তাতে করে পুরো খাতটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।