চলতি অর্থবছরের সাত মাস পার হলেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ঘাটতি ছিল ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এই অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। তবে এই সময়ে শুল্ক-কর মিলিয়ে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশ। এতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাত থেকে এনবিআর রাজস্ব আদায় করে থাকে।
চলতি অর্থবছরে সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই বাজেট বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার জোগান দিতে হবে, যা বাজেটের ৬২ শতাংশের বেশি। কিন্তু অর্থবছরের শুরু থেকেই এনবিআর বড় ধরনের হোঁচট খেয়ে আসছে।
চলতি অর্থবছরের সাত মাস ধরেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বেড়ে চলেছে। প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইতে ২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়। পরে জুলাই থেকে আগস্টে এই ঘাটতি দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ১৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, জুলাই থেকে অক্টোবরে ২০ হাজার ২২১ কোটি টাকা এবং জুলাই থেকে নভেম্বরে তা দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা।
এনবিআরকে লক্ষ্য অর্জনে গত অর্থবছরের চেয়ে ৪৫ শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। কিন্তু সাত মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই লক্ষ্য অর্জনে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়াতে হবে দ্বিগুণের বেশি। এবার গত অর্থবছরের ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে এনবিআরের।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমেই বলছি, এ বছর একটা বড় ঘাটতি আসবে। প্রথমত, খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বাস্তবসম্মত ছিল না রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা। দ্বিতীয়ত, আইন প্রণয়ন করে ভ্যাট আদায়ে যে আশা করা হয়েছিল, তা সঠিকভাবে হয়নি। ভ্যাট থেকে টাকা আসেনি। যে অটোমেশন হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। তৃতীয়ত, সরকারের তরফ থেকে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আমদানি তুলনামূলক কম হচ্ছে। এ কারণে রাজস্ব আদায় কমছে। আবার করপোরেট খাতের অবস্থাও ভালো নয়, যা রাজস্ব আদায়ে প্রভাব ফেলছে।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আগামী অর্থবছরগুলোয় একইভাবে রাজস্ব আদায় কমতে থাকবে। কারণ, আমরা কিন্তু দেখি, বছর শেষে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের যে চিত্র দেয়, পরে সংশোধিত হয়ে আদায় তার চেয়ে কিছুটা কমই হয়। আমার আশঙ্কা, এই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ৮০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকতে পারে। যদি করোনাভাইরাসের প্রভাব বিবেচনা করি, তাহলে ঘাটতি আরও বেশি হতে পারে। ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসের কারণে বন্দরে অ্যাক্টিভিটি কমে গেছে। চীনা আমদানি কমলে স্পষ্টতই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।’