মৌলভীবাজার জেলার বড় ব্যবসাকেন্দ্র শ্রীমঙ্গল। এই করোনাকালে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এ এস এম ইয়াহিয়া। তিনি স্থানীয় মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিমুল তরফদার।
লকডাউন কাটিয়ে এখন যেহেতু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে, সেহেতু শ্রীমঙ্গলের ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে?
মার্চের শেষের দিক থেকে ধীরে ধীরে শ্রীমঙ্গলের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। লকডাউন বা সাধারণ ছুটি শেষে সব দোকানপাট আগের মতোই খোলা হয়েছে। সবাই ব্যবসা করতে শুরু করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকাপয়সা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছেন না। লোকজন আগের মতো জিনিসপত্র কিনছে না। তাই আমরা ব্যবসায়ীরা এখনো ৫০ শতাংশ বেচাকেনা করতে পারছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানপাট ছাড়া অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য এখনো প্রাণ ফিরে পায়নি, বরং একেবারেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
করোনার কারণে শ্রীমঙ্গলে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখে রয়েছে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় তাদের অনেকেই ঘর ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেনি। এখন বকেয়া ভাড়া ও বিল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এ এস এম ইয়াহিয়া
করোনার কারণে এখনো কোন কোন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না? এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় কী?
করোনার কারণে শ্রীমঙ্গলে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখে রয়েছে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় তাদের অনেকেই ঘর ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেনি। এখন বকেয়া ভাড়া ও বিল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা খুবই কঠিন সময় পার করছেন। কারণ, তাঁরা এমনিতেই মূলধন কম বলে ঋণ করে পণ্য তোলেন। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে তাঁরা বিপদে আছেন। তা ছাড়া পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অনেক সংকটে রয়েছে। যেহেতু এখনো ব্যবসা প্রাণ ফিরে পায়নি, তাই ব্যবসায়ীরা সংকট কাটাতে পারছেন না। এই সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে, যদি সরকার জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে পণ্যগুলো সহজে পৌঁছে দেয়। জিনিসের দাম কমলে মানুষ কেনাকাটা করবে বেশি। এখন তো তাদের কাছে টাকাপয়সা কম, তাই কেনাকাটা কম করছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমলে ব্যবসা বাড়বে। তখন ব্যবসায়ীরা করোনায় সৃষ্ট ব্যবসায়িক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাই যেন প্রণোদনা পান, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারকে ব্যবসায়ীদের জন্য কম সুদের ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এ এস এম ইয়াহিয়া
শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ীরা সরকারের কোনো প্রণোদনা পেয়েছেন?
শ্রীমঙ্গলের কোনো ব্যবসায়ী প্রণোদনা পাননি। তবে ব্যবসায়ীদের এই করোনাকালে সংকট কাটাতে প্রণোদনার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পেলে খুবই উপকৃত হবেন।
শ্রীমঙ্গল তো পর্যটন নগর। এখানকার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা করোনাকাল কীভাবে কাটিয়েছেন?
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হোটেল-রিসোর্টের মালিকেরা। শ্রীমঙ্গলে ৬৮টি আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। করোনার আগে আমাদের শ্রীমঙ্গলের সব হোটেল-রিসোর্টর কক্ষ ভাড়াবাবদ দৈনিক প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হতো। কিন্তু করোনার জন্য মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ থাকায় তাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। তারা এখনো সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। করোনাকালে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলও এসেছে তাদের ঘাড়ে।
আপনার নিজের ব্যবসার কী অবস্থা?
আমার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ব্যবসা। করোনাকালে আমার ব্যবসা ভালোই ছিল। কারণ, অন্য কিছু না নিলেও লোকজন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ঠিকই কিনেছে।
করোনাকালে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। এখন কি আবার নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে?
করোনার কারণে আয় অনেক কমে যাওয়ায় কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী সীমিত করেছিল। তবে সেটার পরিমাণ অন্যান্য এলাকা থেকে কম। এখন সবাই আবার তাদের পুরোনো কর্মীদের ফিরিয়ে আনছে। তবে অনেক মালিকই করোনাকালে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন, সাহায্য করেছেন।
সামনে দুর্গাপূজা, এ উপলক্ষে ব্যবসা কেমন জমবে মনে করছেন?
গত রমজানের ঈদ ও কোরবানির ঈদে জামাকাপড়ের দোকানে বিক্রি খুবই কম ছিল। আর শারদীয় দুর্গাপূজা সীমিত আকারে উদ্যাপিত হবে বলে বেচাবিক্রি গতবারের অর্ধেক হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের কাছে আপনাদের কোনো দাবি রয়েছে?
করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাই যেন প্রণোদনা পান, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারকে ব্যবসায়ীদের জন্য কম সুদের ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর জিনিসপত্রের সংকট যেন বাজারে না পড়ে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্যমূল্যে পণ্য পেলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাড়বে। তা না হলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা থেকে সরে গেলে বেকারত্ব বাড়বে।